রেজাউল করিম (সাংবাদিক): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
১টি উৎস উদ্ধার করা হল ও ০টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল।) #IABot (v2.0.9.3 |
|||
(৭ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ১১টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
'''রেজাউল করিম''' ( ১৯০২ - ৫ নভম্বর, ১৯৯৩) ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী [[সাংবাদিক]], সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেন, কুসংস্কারবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তার অবদান আছে। |
{{একই নামের|রেজাউল করিম}}'''রেজাউল করিম''' ( ১৯০২ - ৫ নভম্বর, ১৯৯৩) ছিলেন [[বাঙালি জাতি|বাঙালি]] জাতীয়তাবাদী [[সাংবাদিক]], সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেন, কুসংস্কারবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তার অবদান আছে। |
||
==প্রারম্ভিক জীবন== |
==প্রারম্ভিক জীবন== |
||
রেজাউল করিম [[বীরভূম জেলা]]র মারগ্রামে |
রেজাউল করিম [[বীরভূম জেলা]]র মারগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম ধর্মীয় পরিবেশের মধ্যে মানুষ হলেও তার পরিবার রক্ষণশীল ছিলনা। তিনি উচ্চশিক্ষার প্রেরনা পান লেখক ও সাংবাদিক, অগ্রজ মইনুদ্দিন হোসায়েনের কাছে। প্রথমে [[কলকাতা]]<nowiki/>র তালতলা হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন ও [[সেন্ট জেভিয়ার'স কলেজ, কলকাতা]] থেকে আই এ পাশ করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বক্তব্য শুনে ১৯২১ সালে [[অসহযোগ আন্দোলন|অসহযোগ আন্দোলনে]] যোগ দিয়ে কলেজ ছড়েন। আন্দোলন শেষে [[মুর্শিদাবাদ জেলা]]<nowiki/>র সালারে মাদ্রাসার অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এর কিছুদিন পরে তিনি বহরমপুরে চলে আসেন ও জাতীয়তাবাদী নেতা, মাতুল আব্দুস সামাদের চেষ্টায় আবার কলেজে ভর্তি হন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://archives.anandabazar.com/archive/1110605/4mur-letter.html|শিরোনাম=আড়ালেই দুই ‘মণীষী’|শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=|প্রকাশক=|সংগ্রহের-তারিখ=১৪ জানুয়ারী ২০১৮}}</ref> [[কাশিম বাজার]] মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী তার বক্তৃতা শুনে তার পড়ার ব্যয়ভার বহন করার সিদ্ধান্ত নেন। [[কৃষ্ণনাথ কলেজ]] থেকে ১৯২৮ সালে আই এ ও ১৯৩০ সালে ইংরেজিতে অনার্স পাশ করেন রেজাউল করিম।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান|শেষাংশ=দ্বিতীয় খন্ড|প্রথমাংশ=অঞ্জলি বসু সম্পাদিত|প্রকাশক=সাহিত্য সংসদ|বছর=২০০৪|আইএসবিএন=|অবস্থান=কলকাতা|পাতাসমূহ=৩০৮}}</ref> |
||
==সাংবাদিকতা== |
==সাংবাদিকতা== |
||
কলেজে পড়াকালীন সৌরভ নামক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। মুক্তচিন্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন [[বহরমপুর]] তথা মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন সাময়িকপত্রে তার লেখা এসময় প্রকাশ হয়। অর্থাভাবে [[খিদিরপুর|খিদিরপুরে]]<nowiki/>র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে ইংরেজিতে এম এ পাশ করেন ও আইন পরীক্ষা দেন। কংগ্রেস সাহিত্য সংঘের তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। কলকাতার বাইরে সর্বপ্রথম বহরমপুরে তার সভাপতিত্বে এই সংঘের শাখা তৈরি হয়। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি [[নবযুগ]] পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন, মোহাম্মদী পত্রিকাতে ধারাবাহিকভাবে ফরাসী বিপ্লব নামক লেখা লিখেছেন তিনি। [[মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ]]<nowiki/>র চোদ্দ দফা শর্তের বিরুদ্ধে [[প্রবাসী (পত্রিকা)|প্রবাসী]] পত্রিকায় তার লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে রাজনৈতিক মহলে সাড়া ফেলে। মুসলিম মানসে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটানোর জন্যে দূরবীন পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৫১-৫২ তিনি 'মুর্শিদাবাদ পত্রিকা' সম্পাদনা করতেন। মুসলিম সমাজের আধুনিক ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের পত্রিকা কোহিনূর ও নবনূর পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন রেজাউল করিম। |
কলেজে পড়াকালীন ''সৌরভ'' নামক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। মুক্তচিন্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন [[বহরমপুর]] তথা মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন সাময়িকপত্রে তার লেখা এসময় প্রকাশ হয়। অর্থাভাবে [[খিদিরপুর|খিদিরপুরে]]<nowiki/>র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে ইংরেজিতে এম এ পাশ করেন ও আইন পরীক্ষা দেন। কংগ্রেস সাহিত্য সংঘের তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। কলকাতার বাইরে সর্বপ্রথম বহরমপুরে তার সভাপতিত্বে এই সংঘের শাখা তৈরি হয়। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি [[নবযুগ]] পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন, মোহাম্মদী পত্রিকাতে ধারাবাহিকভাবে ''ফরাসী বিপ্লব'' নামক লেখা লিখেছেন তিনি। [[মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ]]<nowiki/>র চোদ্দ দফা শর্তের বিরুদ্ধে [[প্রবাসী (পত্রিকা)|প্রবাসী]] পত্রিকায় তার লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে রাজনৈতিক মহলে সাড়া ফেলে। মুসলিম মানসে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটানোর জন্যে ''দূরবীন'' পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৫১-৫২ তিনি 'মুর্শিদাবাদ পত্রিকা' সম্পাদনা করতেন। মুসলিম সমাজের আধুনিক ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের পত্রিকা কোহিনূর ও নবনূর পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন রেজাউল করিম। |
||
==সামাজিক অবদান== |
==সামাজিক অবদান== |
||
সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি সমন্বয়ের অন্যতম পথিকৃত ছিলেন রেজাউল করিম। বহরমপুর গার্লস কলেজের হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা প্রথা মেনে পরদিন এক জন ব্রাহ্মণকে শ্রদ্ধা সহ খাইয়ে নিজেদের ব্রত পালন করতেন। রেজাউল করিমকে ব্রাহ্মণ রূপে তারা বরণ করতেন এই উদাহরণ আছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://archives.anandabazar.com/archive/1111216/16mur2.html|শিরোনাম=পুলিশের হম্বিতম্বি সত্ত্বেও ছাত্রের পাশেই অধ্যক্ষ|শেষাংশ=অনল আবেদিন|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=|প্রকাশক=আনন্দবাজার পত্রিকা|সংগ্রহের-তারিখ=১৪ জানুয়ারী ২০১৮}}</ref> ১৯৩০ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নানা কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। মামা আব্দুস সামাদের সাথে এন্টি সেপারেট লীগ স্থাপনে সহায়ক হন। কিছুকাল ব্যংকশাল কোর্ট, আলিপুর ও বহরমপুর আদালতে ওকালতি করেন তিনি। ১৯৮৭ সালে আইন ব্যবসা ছেড়ে অধ্যাপনায় যোগ দেন। ১৯৬০ এর পর থেকে বিধান পরিষদের সদস্য ছিলেন। [[বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ]] ও শরনার্থীদের সহযোগীতা কাজে এগিয়ে এসেছিলেন। |
সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি সমন্বয়ের অন্যতম পথিকৃত ছিলেন রেজাউল করিম। বহরমপুর গার্লস কলেজের হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা প্রথা মেনে পরদিন এক জন ব্রাহ্মণকে শ্রদ্ধা সহ খাইয়ে নিজেদের ব্রত পালন করতেন। রেজাউল করিমকে ব্রাহ্মণ রূপে তারা বরণ করতেন এই উদাহরণ আছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://archives.anandabazar.com/archive/1111216/16mur2.html|শিরোনাম=পুলিশের হম্বিতম্বি সত্ত্বেও ছাত্রের পাশেই অধ্যক্ষ|শেষাংশ=অনল আবেদিন|প্রথমাংশ=|তারিখ=|ওয়েবসাইট=|প্রকাশক=আনন্দবাজার পত্রিকা|সংগ্রহের-তারিখ=১৪ জানুয়ারী ২০১৮}}</ref> ১৯৩০ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নানা কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। মামা আব্দুস সামাদের সাথে এন্টি সেপারেট লীগ স্থাপনে সহায়ক হন। কিছুকাল ব্যংকশাল কোর্ট, আলিপুর ও বহরমপুর আদালতে ওকালতি করেন তিনি। ১৯৮৭ সালে আইন ব্যবসা ছেড়ে অধ্যাপনায় যোগ দেন। ১৯৬০ এর পর থেকে [[বিধান পরিষদ|বিধান পরিষদের]] সদস্য ছিলেন। [[বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ]] ও শরনার্থীদের সহযোগীতা কাজে এগিয়ে এসেছিলেন। শেষ বয়েস সামাজিক ও উন্নয়নমূলক নানা কাজে ব্যপ্ত থাকতেন। অবসরের পরেও শিক্ষাদান করেছেন বহরমপুর গার্লস কলেজে। |
||
==সাহিত্য== |
==সাহিত্য== |
||
রেজাউল করিম বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রকে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তার লেখা বই এর নাম '' |
রেজাউল করিম বহু গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। [[বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|বঙ্কিমচন্দ্রকে]] মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তার লেখা বই এর নাম ''বঙ্কিমচন্দ্র ও মুসলমান সমাজ'' ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল ''নয়া ভারতের ভিত্তি'', ''জাতীয়তার পথে'', ''তুর্কীবীর কামাল পাশা'', ''সাধক দারা শিকোহ'', ''মণীষী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ'', ''সাম্প্রদায়িক সমস্যা ও গান্ধীজী'', ''পাকিস্তানের বিচার'', ''জাগৃতি'', ''কাব্যমালঞ্চ'', ''ফর ইন্ডিয়া এন্ড ইসলাম, মুসলিম এন্ড দ্য কংগ্রেস'', ''দি বুক অফ এওয়ারনেস'', ''এনেকডোটস অফ হজরত মহম্মদ'' ইত্যাদি। |
||
==সম্মান== |
==সম্মান== |
||
সংস্কৃতি ও |
সংস্কৃতি ও সমন্বয়ের চিন্তার ক্ষেত্রে অবদানের কারণে তাকে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করে ১৯৮৪ সালে। সাহিত্যে অবদানের কারণে তিনি বিদ্যাসাগর পুরষ্কারে ভূষিত হন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://aajkaal.in/news/state/rejaul-karim-npgn|শিরোনাম=মন্দিরে ঢাকা পড়েছে মনীষী রেজাউল করিমের মূর্তি|শেষাংশ=https://www.aajkaal.in|ওয়েবসাইট=https://www.aajkaal.in/|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2020-07-30|আর্কাইভের-তারিখ=২০২২-০৪-১৬|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20220416174827/https://aajkaal.in/news/state/rejaul-karim-npgn|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref> |
||
==তথ্যসূত্র== |
==তথ্যসূত্র== |
||
২৩ নং লাইন: | ২৪ নং লাইন: | ||
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি লেখক]] |
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি লেখক]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি প্রাবন্ধিক]] |
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি প্রাবন্ধিক]] |
||
[[বিষয়শ্রেণী:কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী]] |
০৭:৫৫, ২৩ মার্চ ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
রেজাউল করিম ( ১৯০২ - ৫ নভম্বর, ১৯৯৩) ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেন, কুসংস্কারবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তার অবদান আছে।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]রেজাউল করিম বীরভূম জেলার মারগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম ধর্মীয় পরিবেশের মধ্যে মানুষ হলেও তার পরিবার রক্ষণশীল ছিলনা। তিনি উচ্চশিক্ষার প্রেরনা পান লেখক ও সাংবাদিক, অগ্রজ মইনুদ্দিন হোসায়েনের কাছে। প্রথমে কলকাতার তালতলা হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন ও সেন্ট জেভিয়ার'স কলেজ, কলকাতা থেকে আই এ পাশ করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বক্তব্য শুনে ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কলেজ ছড়েন। আন্দোলন শেষে মুর্শিদাবাদ জেলার সালারে মাদ্রাসার অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এর কিছুদিন পরে তিনি বহরমপুরে চলে আসেন ও জাতীয়তাবাদী নেতা, মাতুল আব্দুস সামাদের চেষ্টায় আবার কলেজে ভর্তি হন।[১] কাশিম বাজার মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী তার বক্তৃতা শুনে তার পড়ার ব্যয়ভার বহন করার সিদ্ধান্ত নেন। কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯২৮ সালে আই এ ও ১৯৩০ সালে ইংরেজিতে অনার্স পাশ করেন রেজাউল করিম।[২]
সাংবাদিকতা
[সম্পাদনা]কলেজে পড়াকালীন সৌরভ নামক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। মুক্তচিন্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন সাময়িকপত্রে তার লেখা এসময় প্রকাশ হয়। অর্থাভাবে খিদিরপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম এ পাশ করেন ও আইন পরীক্ষা দেন। কংগ্রেস সাহিত্য সংঘের তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। কলকাতার বাইরে সর্বপ্রথম বহরমপুরে তার সভাপতিত্বে এই সংঘের শাখা তৈরি হয়। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি নবযুগ পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন, মোহাম্মদী পত্রিকাতে ধারাবাহিকভাবে ফরাসী বিপ্লব নামক লেখা লিখেছেন তিনি। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর চোদ্দ দফা শর্তের বিরুদ্ধে প্রবাসী পত্রিকায় তার লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে রাজনৈতিক মহলে সাড়া ফেলে। মুসলিম মানসে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটানোর জন্যে দূরবীন পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৫১-৫২ তিনি 'মুর্শিদাবাদ পত্রিকা' সম্পাদনা করতেন। মুসলিম সমাজের আধুনিক ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের পত্রিকা কোহিনূর ও নবনূর পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন রেজাউল করিম।
সামাজিক অবদান
[সম্পাদনা]সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি সমন্বয়ের অন্যতম পথিকৃত ছিলেন রেজাউল করিম। বহরমপুর গার্লস কলেজের হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীরা প্রথা মেনে পরদিন এক জন ব্রাহ্মণকে শ্রদ্ধা সহ খাইয়ে নিজেদের ব্রত পালন করতেন। রেজাউল করিমকে ব্রাহ্মণ রূপে তারা বরণ করতেন এই উদাহরণ আছে।[৩] ১৯৩০ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নানা কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। মামা আব্দুস সামাদের সাথে এন্টি সেপারেট লীগ স্থাপনে সহায়ক হন। কিছুকাল ব্যংকশাল কোর্ট, আলিপুর ও বহরমপুর আদালতে ওকালতি করেন তিনি। ১৯৮৭ সালে আইন ব্যবসা ছেড়ে অধ্যাপনায় যোগ দেন। ১৯৬০ এর পর থেকে বিধান পরিষদের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ ও শরনার্থীদের সহযোগীতা কাজে এগিয়ে এসেছিলেন। শেষ বয়েস সামাজিক ও উন্নয়নমূলক নানা কাজে ব্যপ্ত থাকতেন। অবসরের পরেও শিক্ষাদান করেছেন বহরমপুর গার্লস কলেজে।
সাহিত্য
[সম্পাদনা]রেজাউল করিম বহু গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রকে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তার লেখা বই এর নাম বঙ্কিমচন্দ্র ও মুসলমান সমাজ ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল নয়া ভারতের ভিত্তি, জাতীয়তার পথে, তুর্কীবীর কামাল পাশা, সাধক দারা শিকোহ, মণীষী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সাম্প্রদায়িক সমস্যা ও গান্ধীজী, পাকিস্তানের বিচার, জাগৃতি, কাব্যমালঞ্চ, ফর ইন্ডিয়া এন্ড ইসলাম, মুসলিম এন্ড দ্য কংগ্রেস, দি বুক অফ এওয়ারনেস, এনেকডোটস অফ হজরত মহম্মদ ইত্যাদি।
সম্মান
[সম্পাদনা]সংস্কৃতি ও সমন্বয়ের চিন্তার ক্ষেত্রে অবদানের কারণে তাকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করে ১৯৮৪ সালে। সাহিত্যে অবদানের কারণে তিনি বিদ্যাসাগর পুরষ্কারে ভূষিত হন।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "আড়ালেই দুই 'মণীষী'"। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারী ২০১৮।
- ↑ দ্বিতীয় খন্ড, অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০৪)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩০৮।
- ↑ অনল আবেদিন। "পুলিশের হম্বিতম্বি সত্ত্বেও ছাত্রের পাশেই অধ্যক্ষ"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারী ২০১৮।
- ↑ https://www.aajkaal.in। "মন্দিরে ঢাকা পড়েছে মনীষী রেজাউল করিমের মূর্তি"। https://www.aajkaal.in/ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-৩০।
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)