বিষয়বস্তুতে চলুন

শাহাবুদ্দিন আহমেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
 
(২০ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ৩৪টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{সম্পর্কে|বাংলাদেশের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি|একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের|শাহাবুদ্দিন আহমেদ (দ্ব্যর্থতা নিরসন)}}
{{সম্পর্কে|বাংলাদেশের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি|একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের|শাহাবুদ্দিন আহমেদ (দ্ব্যর্থতা নিরসন)}}
{{Infobox Officeholder
{{Infobox Officeholder
| name = সাহাবুদ্দিন আহমদ
| name = শাহাবুদ্দিন আহমেদ
| image =
| image =Shahabuddin Ahmed.jpg
| image_size =
| image_size =
| office = [[বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি]]
| office = [[বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি]]
| term_start = ১ জানুয়ারি ১৯৯০
| term_start = [[১ জানুয়ারি]] ১৯৯০
| term_end = [[৩১ জানুয়ারি]] ১৯৯৫
| term_end = [[৩১ জানুয়ারি]] ১৯৯৫
| predecessor = [[বদরুল হায়দার চৌধুরী|বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী]]
| predecessor = [[বদরুল হায়দার চৌধুরী]]
| successor = [[মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান|বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান]]
| successor = [[মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান|বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান]]
| office1 = [[বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি]]<br><small>(অন্তর্বর্তীকালীন)</small>
| office1 = [[বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি]]<br><small>(অন্তর্বর্তীকালীন)</small>
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
| office2 = [[বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি]]
| office2 = [[বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি]]
| term_start2 = ২৩ জুলাই ১৯৯৬
| term_start2 = ২৩ জুলাই ১৯৯৬
| term_end2 = ১৪ নভেম্বর ২০০১
| term_end2 = ১৪ নভেম্বর ২০০১
| primeminister = [[শেখ হাসিনা]], [[খালেদা জিয়া]]
| primeminister = [[শেখ হাসিনা]],
[[খালেদা জিয়া]]
| successor2 = [[একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী]]
| predecessor = [[আবদুর রহমান বিশ্বাস]]
| successor2 = [[একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী]]
| birth_date = {{জন্ম তারিখ|1930|2|1|mf=y}}
| birth_date = {{জন্ম তারিখ|1930|2|1|mf=y}}
| birth_place = পেমই গ্রাম, [[কেন্দুয়া উপজেলা|কেন্দুয়া]], [[নেত্রকোণা জেলা|নেত্রকোণা]], [[বাংলাদেশ]]
| birth_place = পেমই গ্রাম, [[কেন্দুয়া উপজেলা|কেন্দুয়া]], [[নেত্রকোণা জেলা|নেত্রকোণা]], [[বাংলাদেশ]]
| death_date = ১৯ মার্চ ২০২২
| death_date = ১৯ মার্চ ২০২২
| death_place = সিএমএইচ হাসপাতাল, ঢাকা
| death_place = সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা
| residence = [[ঢাকা]]
| residence = [[ঢাকা]]
| citizenship = {{BAN}}
| citizenship = {{BAN}}
| nationality = [[বাংলাদেশী]]
| nationality = [[বাংলাদেশী]]
| alma_mater = <!--[[চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়]]<br>-->[[গুরুদয়াল কলেজ]]<br>[[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]<br>[[অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়]]
| alma_mater = <!--[[চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়]]<br>-->[[গুরুদয়াল সরকারি কলেজ]]<br>[[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]<br>[[অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়]]
| occupation = আইন
| occupation = আইন
| profession = আইনবিদ
| profession = আইনবিদ
| birth name =
| birth name =
| spouse =
| spouse =
| children =
| children =
| ethnicity = [[বাঙালি]]
| ethnicity = [[বাঙালি]]
| religion = [[ইসলাম]]
| religion = [[ইসলাম]]
| signature =
| signature =
| website =
| website =
| footnotes =
| footnotes =
}}
}}


'''বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ''' (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০ - ১৯ মার্চ ২০২২) [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ও ৬ষ্ঠ [[বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিবৃন্দের তালিকা|প্রধান বিচারপতি]] এবং দু'বার দায়িত্বপালনকারী [[বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি|রাষ্ট্রপতি]]। তিনি প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হতে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসাবে এবং পরবর্তীতে [[আওয়ামী লীগ]] সরকারের ক্ষমতায় থাকা-কালীন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।<ref>[http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDNfMjFfMTNfMV8yXzFfMjc4MjQ= বঙ্গভবনে বঙ্গবন্ধু থেকে জিল্লুর রহমান।]</ref><ref name="খবর">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=শুক্রবার তিন সাবেক রাষ্ট্রপতির জন্মদিন। |ইউআরএল=http://khobor24.net/?p=4065 |সংগ্রহের-তারিখ=৯ জুলাই ২০১৫ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20150323182303/http://khobor24.net/?p=4065 |আর্কাইভের-তারিখ=২৩ মার্চ ২০১৫ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=শাহাবুদ্দিন আহমেদ-এর জন্মদিন। |ইউআরএল=http://www.priyo.com/people/8710 |সংগ্রহের-তারিখ=৯ জুলাই ২০১৫ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160304141757/http://www.priyo.com/people/8710 |আর্কাইভের-তারিখ=৪ মার্চ ২০১৬ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref>
বিচারপতি '''সাহাবুদ্দিন আহমদ''' (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০-১৯ মার্চ ২০২২) [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ও ৬ষ্ঠ [[বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিদের তালিকা|প্রধান বিচারপতি]] এবং দু'বার দায়িত্বপালনকারী [[বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি|রাষ্ট্রপতি]]। তিনি প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হতে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসাবে এবং পরবর্তীতে [[বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ]] সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।<ref>[http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDNfMjFfMTNfMV8yXzFfMjc4MjQ= বঙ্গভবনে বঙ্গবন্ধু থেকে জিল্লুর রহমান।]</ref><ref name="খবর">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=শুক্রবার তিন সাবেক রাষ্ট্রপতির জন্মদিন। |ইউআরএল=http://khobor24.net/?p=4065 |সংগ্রহের-তারিখ=৯ জুলাই ২০১৫ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20150323182303/http://khobor24.net/?p=4065 |আর্কাইভের-তারিখ=২৩ মার্চ ২০১৫ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=শাহাবুদ্দিন আহমেদ-এর জন্মদিন। |ইউআরএল=http://www.priyo.com/people/8710 |সংগ্রহের-তারিখ=৯ জুলাই ২০১৫ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160304141757/http://www.priyo.com/people/8710 |আর্কাইভের-তারিখ=৪ মার্চ ২০১৬ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদে নিরপেক্ষ ভূমিকার জন্য প্রশংসিত ছিলেন।<ref name="বিবিসি"/>


== জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি ==
== জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি ==
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি [[নেত্রকোণা জেলা|নেত্রকোণা জেলার]] [[কেন্দুয়া উপজেলা|কেন্দুয়া উপজেলার]] পেমই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।<ref name="খবর" /> তার পিতার নাম তালুকদার রিসাত আহমেদ; তিনি একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। শাহাবুদ্দিন [[নান্দাইল উপজেলা|নান্দাইলে]] তাঁর বোনের বাড়িতে বড় হন।<ref name="প্রাণোল্লাস"/> শাহাবুদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম। তিনি তিনটি কন্যা দুটি পুত্র সন্তানের জনক। তার জ্যেষ্ঠা কন্যা ড. মিসেস সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের [[সহকারী অধ্যাপক]]। দ্বিতীয়া কন্যা মিসেস সামিনা পারভীন একজন [[স্থপতি]]। তার পুত্র শিবলী আহমেদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। আরেক পুত্র সোহেল আহমেদ কলেজ ছাত্র। সর্বকনিষ্ঠা কন্যা সামিয়া পারভীন চারুকলা কলেজের ছাত্রী।
বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি [[নেত্রকোণা জেলা|নেত্রকোণা জেলার]] [[কেন্দুয়া উপজেলা|কেন্দুয়া উপজেলার]] [[পাইকুড়া ইউনিয়ন|পাইকুড়া ইউনিয়নের]] পেমই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।<ref name="খবর" /> তার পিতার নাম তালুকদার রিসাত আহমেদ; তিনি একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সাহাবুদ্দিন [[নান্দাইল উপজেলা|নান্দাইলে]] তাঁর বোনের বাড়িতে বড় হন।<ref name="প্রাণোল্লাস"/> তাঁর সহধর্মিণী আনোয়ারা আহমদ গত ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বড় মেয়ে অধ্যাপক ড. সিতারা পারভিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। দ্বিতীয় মেয়ে শাহানা স্মিথের বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ছোট মেয়ে সামিয়া পারভীন একজন স্থপতি। তিনি বাস করেন যুক্তরাজ্যে। বড় ছেলে শিবলী আহমদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি ছোট ছেলে সোহেল আহমদ এর সাথে ছিলেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শেষাংশ=Dhakatimes24.com|শিরোনাম=যেমন আছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ|ইউআরএল=https://www.dhakatimes24.com/2021/04/26/211848/যেমন-আছেন-সাবেক-রাষ্ট্রপতি-সাহাবুদ্দীন-আহমদ|সংগ্রহের-তারিখ=2022-03-24|ওয়েবসাইট=Dhakatimes News}}</ref>


== শিক্ষাজীবন ==
== শিক্ষাজীবন ==
শাহাবুদ্দিন ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের [[চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়|চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয়]] থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন।<ref name="প্রাণোল্লাস">{{ম্যাগাজিন উদ্ধৃতি|শিরোনাম=জ্যোতির্ময় লক্ষত্রের গল্প|প্রথমাংশ=আলী আহসান খান|শেষাংশ=পারভেজ|ম্যাগাজিন=প্রাণোল্লাস: শতবর্ষ উদ্‌যাপন|প্রকাশক=চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়|বছর=২০১৫}}</ref> ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের [[গুরুদয়াল সরকারী কলেজ|গুরুদয়াল কলেজ]] থেকে আইএ পাশ করার পর [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে [[আন্তর্জাতিক সম্পর্ক]] বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথমে [[লাহোর|লাহোরের]] সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং পরে [[অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়|অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে]] জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
সাহাবুদ্দিন ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের [[চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়|চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয়]] থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন।<ref name="প্রাণোল্লাস">{{ম্যাগাজিন উদ্ধৃতি|শিরোনাম=জ্যোতির্ময় লক্ষত্রের গল্প|প্রথমাংশ=আলী আহসান খান|শেষাংশ=পারভেজ|ম্যাগাজিন=প্রাণোল্লাস: শতবর্ষ উদ্‌যাপন|প্রকাশক=চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়|বছর=২০১৫}}</ref> ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের [[গুরুদয়াল সরকারি কলেজ|গুরুদয়াল কলেজ]] থেকে আইএ পাস করার পর [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে [[আন্তর্জাতিক সম্পর্ক]] বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথমে [[লাহোর|লাহোরের]] সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং পরে [[অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়|অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে]] জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।


== কর্মজীবন ==
== কর্মজীবন ==
শাহাবুদ্দিন আহমেদের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে। এরপর তিনি [[গোপালগঞ্জ জেলা|গোপালগঞ্জ]] ও [[নাটোর জেলা|নাটোরের]] মহকুমা কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী [[জেলা প্রশাসক]] হিসাবে পদোন্নতি পান। এর পর ১৯৬০ সালে তিনি প্রশাসন হতে বিচার বিভাগে বদলি হন। তিনি [[ঢাকা]] ও [[বরিশাল|বরিশালের]] অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে এবং [[কুমিল্লা]] ও [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তাকে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭২ সনের [[২০ জানুয়ারি]] হাইকোর্টের বেঞ্চে তাকে [[বিচারক]] হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৮০ সনের [[৭ ফেব্রুয়ারি]] তাকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ঢাকা ল রিপোর্ট, বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিসন এবং বাংলাদেশ কেস রিপোর্টসে তার প্রচুরসংখ্যক রায় প্রকাশ করা হয়। চাকুরিসম্পর্কিত, নির্বাচন নিয়ে কলহ, শ্রম ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক ইত্যাদি কেসে তার গৃহীত বিচারের রায় বহুল সমাদৃত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৮ম সংশোধনী সম্পর্কিত কেসে তার দেয়া রায় যুগান্তকারী এবং [[বাংলাদেশের সংবিধান|বাংলাদেশের সংবিধানের]] পরিশোধনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] ১৯৮৩ সালের মধ্য-ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু লোক নিহত এবং অনেক লোক আহত হয়েছিল। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সেই ঘটনার তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাহাবুদ্দিন আহমদের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে। এরপর তিনি [[গোপালগঞ্জ জেলা|গোপালগঞ্জ]] ও [[নাটোর জেলা|নাটোরের]] মহকুমা কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী [[জেলা প্রশাসক]] হিসাবে পদোন্নতি পান। এর পর ১৯৬০ সালে তিনি প্রশাসন হতে বিচার বিভাগে বদলি হন। তিনি [[ঢাকা]] ও [[বরিশাল|বরিশালের]] অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে এবং [[কুমিল্লা]] ও [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তাকে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭২ সনের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টের বেঞ্চে তাকে বিচারক হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৮০ সনের ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ঢাকা ল রিপোর্ট, বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিশন এবং বাংলাদেশ কেস রিপোর্টসে তার প্রচুরসংখ্যক রায় প্রকাশ করা হয়। চাকুরিসম্পর্কিত, নির্বাচন নিয়ে কলহ, শ্রম ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক ইত্যাদি কেসে তার গৃহীত বিচারের রায় বহুল সমাদৃত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৮ম সংশোধনী সম্পর্কিত কেসে তার দেয়া রায় যুগান্তকারী এবং [[বাংলাদেশের সংবিধান|বাংলাদেশের সংবিধানের]] পরিশোধনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] ১৯৮৩ সালের মধ্য-ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু লোক নিহত এবং অনেক লোক আহত হয়েছিল। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ সেই ঘটনার তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।


== ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ==
== ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ==
শাহাবুদ্দিন আহমেদের রাজনীতিতে আসাটা কিছুটা নাটকীয়। [[ডিসেম্বর ৫|৫ ডিসেম্বর]] ১৯৯০, মওদুদ আহমেদ উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে তিনি উপ-রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। [[ডিসেম্বর ৬|৬ ডিসেম্বর]] ১৯৯০ রাষ্ট্রপতি জেনারেল [[হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ]] ক্ষমতাচ্যুত হবার পর, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শূন্য রাষ্ট্রপতির পদে এবং নির্বাচন হবার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানরূপে কে আসীন হবেন তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছিল না। এক দল অন্য দলের প্রার্থীর প্রতি অনাস্থা পোষণ করছিল। অবশেষে যখন বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নাম এলো,তখন দুটি দলই ঐকমত্য পোষণ করল যে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন-ই একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারেন। [[ফেব্রুয়ারি ২৭|২৭ ফেব্রুয়ারি]] ১৯৯১ বাংলাদেশের ৫ম জাতীয় সাধারণ নির্বাচনের পর তিনি আবার তার মূল পদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন।
সাহাবুদ্দিন আহমদের রাজনীতিতে আসাটা কিছুটা নাটকীয়। ৫ ডিসেম্বর ১৯৯০, মওদুদ আহমেদ উপ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে তিনি উপ রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ রাষ্ট্রপতি জেনারেল [[হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ]] ক্ষমতাচ্যুত হবার পর, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শূন্য রাষ্ট্রপতির পদে এবং নির্বাচন হবার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানরূপে কে আসীন হবেন তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছিল না। এক দল অন্য দলের প্রার্থীর প্রতি অনাস্থা পোষণ করছিল। অবশেষে যখন বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নাম এলো,তখন দুটি দলই ঐকমত্য পোষণ করল যে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন-ই একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ বাংলাদেশের ৫ম জাতীয় সাধারণ নির্বাচনের পর তিনি আবার তার মূল পদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন।


== রাষ্ট্রপতি ==
== রাষ্ট্রপতি ==
১৯৯৬ সালের [[জুলাই ২৩|২৩ জুলাই]] তিনি [[বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগের]] দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদে মনোনয়নের পর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই [[বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি]] নির্বাচিত হন। যদিও সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সীমিত, তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার সততা এবং প্রজ্ঞা দ্বারা বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের [[ভালোবাসা]] ও সম্মান জয় করেন। [[১৪ নভেম্বর|১৪ই নভেম্বর]], ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি [[রাষ্ট্রপতি|রাষ্ট্রপতির]] পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই তিনি [[বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগের]] দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদে মনোনয়নের পর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই [[বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি]] নির্বাচিত হন। যদিও সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সীমিত, তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার সততা এবং প্রজ্ঞা দ্বারা বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান জয় করেন। ১৪ই নভেম্বর ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন।

==সরকারের সাথে মতবিরোধ==
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নির্দলীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর [[জননিরাপত্তা আইন]] নামের একটি বিতর্কিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। সেকারণে তার সাথে তৎকালীন সরকার এবং আওয়ামী লীগের তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই সম্পর্কের আর উন্নতি ঘটেনি।
২০১৬ সালে [[বিবিসি বাংলা]]র সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক [[আনিসুজ্জামান (অধ্যাপক)|আনিসুজ্জামান]] বলেছিলেন, "রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারি প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে চাওয়ায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। উনি নিজেকে যতদূর সম্ভব সরকারি বাধা-নিষেধের প্রভাবমুক্ত করে কিছু কথা বলেছিলেন, দেশের কল্যাণের জন্য। এই ধরনের কথা তিনি বলেছিলেন এবং কাজ তিনি করেছিলেন, তাতে পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিছুটা রূষ্টই হয়েছিল।"<ref name="বিবিসি">{{সংবাদ উদ্ধৃতি|তারিখ=১৯ মার্চ ২০২২ |শিরোনাম=বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ: বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি মারা গেছেন |ইউআরএল=https://www.bbc.com/bengali/news-60804401 |সংগ্রহের-তারিখ=৬ জানুয়ারি ২০২৩}}</ref>

==মৃত্যু ==
==মৃত্যু ==
তিনি ২০২২ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি ২০২২ সালের ১৯ মার্চ, সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ৯২ বছর বয়সে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শেষাংশ=প্রতিনিধি|ভাষা=bn|শিরোনাম=নেত্রকোনায় হবে সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রথম জানাজা|ইউআরএল=https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/নেত্রকোনায়-হবে-সাহাবুদ্দীন-আহমদের-প্রথম-জানাজা|সংগ্রহের-তারিখ=2022-03-19|ওয়েবসাইট=Prothomalo}}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=নভেম্বর ২০২২ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref>


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
৭৮ নং লাইন: ৮৩ নং লাইন:
{{s-end}}
{{s-end}}


{{অসম্পূর্ণ}}
{{বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি}}
{{বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি}}


[[বিষয়শ্রেণী:১৯৩০-এ জন্ম]]
[[বিষয়শ্রেণী:১৯৩০-এ জন্ম]]
[[বিষয়শ্রেণী:২০২২-এ মৃত্যু]]
[[বিষয়শ্রেণী:২০২২-এ মৃত্যু]]
[[বিষয়শ্রেণী:জীবিত ব্যক্তি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি]]
৯০ নং লাইন: ৯৩ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী বিচারক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশী বিচারক]]
[[বিষয়শ্রেণী:নেত্রকোণা জেলার ব্যক্তি]]
[[বিষয়শ্রেণী:নেত্রকোণা জেলার ব্যক্তি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি]]

১৩:৫০, ৭ জুন ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সাহাবুদ্দিন আহমদ
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি
কাজের মেয়াদ
১ জানুয়ারি ১৯৯০ – ৩১ জানুয়ারি ১৯৯৫
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া
পূর্বসূরীবদরুল হায়দার চৌধুরী
উত্তরসূরীবিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
(অন্তর্বর্তীকালীন)
কাজের মেয়াদ
৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ – ৯ অক্টোবর ১৯৯১
পূর্বসূরীহুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ
উত্তরসূরীআবদুর রহমান বিশ্বাস
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
২৩ জুলাই ১৯৯৬ – ১৪ নভেম্বর ২০০১
উত্তরসূরীএকিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৩০-০২-০১)১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০
পেমই গ্রাম, কেন্দুয়া, নেত্রকোণা, বাংলাদেশ
মৃত্যু১৯ মার্চ ২০২২
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
বাসস্থানঢাকা
প্রাক্তন শিক্ষার্থীগুরুদয়াল সরকারি কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাআইন
জীবিকাআইনবিদ
ধর্মইসলাম

বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০-১৯ মার্চ ২০২২) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ও ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি এবং দু'বার দায়িত্বপালনকারী রাষ্ট্রপতি। তিনি প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হতে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসাবে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[][][] তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদে নিরপেক্ষ ভূমিকার জন্য প্রশংসিত ছিলেন।[]

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি

[সম্পাদনা]

বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের পেমই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার পিতার নাম তালুকদার রিসাত আহমেদ; তিনি একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সাহাবুদ্দিন নান্দাইলে তাঁর বোনের বাড়িতে বড় হন।[] তাঁর সহধর্মিণী আনোয়ারা আহমদ গত ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বড় মেয়ে অধ্যাপক ড. সিতারা পারভিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। দ্বিতীয় মেয়ে শাহানা স্মিথের বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ছোট মেয়ে সামিয়া পারভীন একজন স্থপতি। তিনি বাস করেন যুক্তরাজ্যে। বড় ছেলে শিবলী আহমদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি ছোট ছেলে সোহেল আহমদ এর সাথে ছিলেন।[]

শিক্ষাজীবন

[সম্পাদনা]

সাহাবুদ্দিন ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন।[] ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথমে লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

সাহাবুদ্দিন আহমদের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে। এরপর তিনি গোপালগঞ্জনাটোরের মহকুমা কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী জেলা প্রশাসক হিসাবে পদোন্নতি পান। এর পর ১৯৬০ সালে তিনি প্রশাসন হতে বিচার বিভাগে বদলি হন। তিনি ঢাকাবরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে এবং কুমিল্লাচট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তাকে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭২ সনের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টের বেঞ্চে তাকে বিচারক হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৮০ সনের ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ঢাকা ল রিপোর্ট, বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিশন এবং বাংলাদেশ কেস রিপোর্টসে তার প্রচুরসংখ্যক রায় প্রকাশ করা হয়। চাকুরিসম্পর্কিত, নির্বাচন নিয়ে কলহ, শ্রম ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক ইত্যাদি কেসে তার গৃহীত বিচারের রায় বহুল সমাদৃত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৮ম সংশোধনী সম্পর্কিত কেসে তার দেয়া রায় যুগান্তকারী এবং বাংলাদেশের সংবিধানের পরিশোধনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৩ সালের মধ্য-ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু লোক নিহত এবং অনেক লোক আহত হয়েছিল। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ সেই ঘটনার তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি

[সম্পাদনা]

সাহাবুদ্দিন আহমদের রাজনীতিতে আসাটা কিছুটা নাটকীয়। ৫ ডিসেম্বর ১৯৯০, মওদুদ আহমেদ উপ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে তিনি উপ রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হবার পর, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শূন্য রাষ্ট্রপতির পদে এবং নির্বাচন হবার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানরূপে কে আসীন হবেন তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছিল না। এক দল অন্য দলের প্রার্থীর প্রতি অনাস্থা পোষণ করছিল। অবশেষে যখন বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নাম এলো,তখন দুটি দলই ঐকমত্য পোষণ করল যে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন-ই একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ বাংলাদেশের ৫ম জাতীয় সাধারণ নির্বাচনের পর তিনি আবার তার মূল পদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন।

রাষ্ট্রপতি

[সম্পাদনা]

১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই তিনি আওয়ামী লীগের দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদে মনোনয়নের পর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। যদিও সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সীমিত, তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার সততা এবং প্রজ্ঞা দ্বারা বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান জয় করেন। ১৪ই নভেম্বর ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন।

সরকারের সাথে মতবিরোধ

[সম্পাদনা]

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নির্দলীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জননিরাপত্তা আইন নামের একটি বিতর্কিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। সেকারণে তার সাথে তৎকালীন সরকার এবং আওয়ামী লীগের তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই সম্পর্কের আর উন্নতি ঘটেনি। ২০১৬ সালে বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছিলেন, "রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারি প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে চাওয়ায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। উনি নিজেকে যতদূর সম্ভব সরকারি বাধা-নিষেধের প্রভাবমুক্ত করে কিছু কথা বলেছিলেন, দেশের কল্যাণের জন্য। এই ধরনের কথা তিনি বলেছিলেন এবং কাজ তিনি করেছিলেন, তাতে পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিছুটা রূষ্টই হয়েছিল।"[]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

তিনি ২০২২ সালের ১৯ মার্চ, সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে ৯২ বছর বয়সে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. বঙ্গভবনে বঙ্গবন্ধু থেকে জিল্লুর রহমান।
  2. "শুক্রবার তিন সাবেক রাষ্ট্রপতির জন্মদিন"। ২৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৫ 
  3. "শাহাবুদ্দিন আহমেদ-এর জন্মদিন"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৫ 
  4. "বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ: বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি মারা গেছেন"। ১৯ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২৩ 
  5. পারভেজ, আলী আহসান খান (২০১৫)। "জ্যোতির্ময় লক্ষত্রের গল্প"। প্রাণোল্লাস: শতবর্ষ উদ্‌যাপন। চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। 
  6. Dhakatimes24.com। "যেমন আছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ"Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২৪ 
  7. প্রতিনিধি। "নেত্রকোনায় হবে সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রথম জানাজা"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
আইন দফতর
পূর্বসূরী
বদরুল হায়দার চৌধুরী
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি
১৯৯০–১৯৯৫
উত্তরসূরী
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
ভারপ্রাপ্ত

১৯৯০–১৯৯১
উত্তরসূরী
আবদুর রহমান বিশ্বাস
পূর্বসূরী
আবদুর রহমান বিশ্বাস
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
১৯৯৬–২০০১
উত্তরসূরী
একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী