বিষয়বস্তুতে চলুন

কাশ্মীর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Samiha Hossain (আলোচনা | অবদান)
সংশোধন
Niranjan Chandra Debnath (আলোচনা | অবদান)
সম্প্রসারণ
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[চিত্র:Kashmir region 2004.jpg|thumb|'''রাজনৈতিক মানচিত্র:''' কাশ্মীর অঞ্চলের জেলাসমূহ, [[পীর পঞ্জল]] পর্বতমালা, এবং [[কাশ্মীর উপত্যকা]]।]]
[[চিত্র:Kashmir region 2004.jpg|thumb|'''রাজনৈতিক মানচিত্র:''' কাশ্মীর অঞ্চলের জেলাসমূহ, [[পীর পঞ্জল]] পর্বতমালা, এবং [[কাশ্মীর উপত্যকা]]।]]
[[চিত্র:Nanga parbat, Pakistan by gul791.jpg|thumb|'''নবম-সর্বোচ্চ:''' [[নঙ্গ পর্বত]], আরোহণের জন্য মারাত্মক একটি পর্বত, এটি পাকিস্তানে [[গিলগিট-বালতিস্তান]]ের কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থিত।]]'''কাশ্মীর''' ([[বালটি ভাষা|বালটি]], [[গোজরি]], [[পোটওয়ারি ভাষা|পোঞ্ছি / চিভালি]], [[ডোগরি ভাষা|ডোগরি]]: कश्मीर; [[কাশ্মীরি ভাষা|কাশ্মীরি]]: कॅशीर, کشیر; [[লাদাখি ভাষা|লাদাখি]]: ཀཤམིར; [[উইগুর ভাষা|উইগুর]]: كەشمىر; [[শিনা ভাষা|শিনা]]: کشمیر) হল [[ভারতীয় উপমহাদেশ|ভারতীয় উপমহাদেশের]] উত্তরপশ্চিমের একটি অঞ্চল। ১৯শ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, কাশ্মীর শব্দটি ভৌগোলিকভাবে শুধু [[হিমালয় পর্বতমালা|বিশাল হিমালয়]] এবং [[পীর পঞ্জল পর্বতমালা]]র উপত্যকাকে নির্দেশনা করা হতো। আজ কাশ্মীর বলতে বোঝায় একটি বিশাল অঞ্চল যা [[ভারত|ভারতীয়]]-শাসিত রাজ্য [[জম্মু ও কাশ্মীর]] (এর মধ্যে বিভাগসমূহ রয়েছে: [[কাশ্মীর উপত্যকা]], [[জম্মু]] এবং [[লাদাখ]]), [[পাকিস্তান|পাকিস্তানি]]-শাসিত [[গিলগিত-বালতিস্তান]] এবং [[আজাদ কাশ্মীর]] প্রদেশ এবং [[গণচীন|চীন]]-শাসিত [[আকসাই চীন]] এবং [[ট্রান্স-কারাকোরাম ট্রাক্ট]] অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত।<ref name=britannica-intro>{{বিশ্বকোষ উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Kashmir: region, Indian subcontinent|বিশ্বকোষ=[[এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা]]|সংগ্রহের-তারিখ=১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯|ভাষা=en|ইউআরএল=https://www.britannica.com/place/Kashmir-region-Indian-subcontinent}}</ref><ref name=bbc-intro>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Kashmir territories profile|প্রকাশক=[[বিবিসি নিউজ]] |সংগ্রহের-তারিখ=১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯|ভাষা=en|ইউআরএল=https://www.bbc.com/news/world-south-asia-11693674}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Kashmir profile—timeline|প্রকাশক=[[বিবিসি নিউজ]] |সংগ্রহের-তারিখ=১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯|ভাষা=en|ইউআরএল=https://www.bbc.com/news/world-south-asia-16069078}}</ref>
[[চিত্র:Nanga parbat, Pakistan by gul791.jpg|thumb|'''নবম-সর্বোচ্চ:''' [[নঙ্গ পর্বত]], আরোহণের জন্য মারাত্মক একটি পর্বত, এটি পাকিস্তানে [[গিলগিট-বালতিস্তান]]ের কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থিত।]]'''কাশ্মীর''' হল [[ভারতীয় উপমহাদেশ|ভারতীয় উপমহাদেশের]] উত্তরপশ্চিমের একটি অঞ্চল। ১৯শ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, কাশ্মীর শব্দটি ভৌগোলিকভাবে শুধু [[হিমালয় পর্বতমালা|গিরিরাজ হিমালয়]] এবং [[পীর পঞ্জল পর্বতমালা]]র উপত্যকাকে নির্দেশনা করা হতো। আজ কাশ্মীর বলতে বোঝায় একটি বিশাল অঞ্চল যা [[ভারত|ভারতীয়]]-শাসিত রাজ্য [[জম্মু ও কাশ্মীর]] এবং [[লাদাখ]], [[পাকিস্তান|পাকিস্তানি]]-শাসিত [[গিলগিত-বালতিস্তান]] এবং [[আজাদ কাশ্মীর]] প্রদেশ এবং [[গণচীন|চীন]]-শাসিত [[আকসাই চীন]] এবং [[ট্রান্স-কারাকোরাম ট্রাক্ট]] অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত।<ref name=britannica-intro>{{বিশ্বকোষ উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Kashmir: region, Indian subcontinent|বিশ্বকোষ=[[এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা]]|সংগ্রহের-তারিখ=১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯|ভাষা=en|ইউআরএল=https://www.britannica.com/place/Kashmir-region-Indian-subcontinent}}</ref><ref name=bbc-intro>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Kashmir territories profile|প্রকাশক=[[বিবিসি নিউজ]] |সংগ্রহের-তারিখ=১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯|ভাষা=en|ইউআরএল=https://www.bbc.com/news/world-south-asia-11693674}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Kashmir profile—timeline|প্রকাশক=[[বিবিসি নিউজ]] |সংগ্রহের-তারিখ=১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯|ভাষা=en|ইউআরএল=https://www.bbc.com/news/world-south-asia-16069078}}</ref>


১ম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে কাশ্মীর অঞ্চল হিন্দুধর্ম ও পরে বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে, পরে নবম শতাব্দীতে কাশ্মীর শাইভিবাদের উত্থান ঘটে।<ref>Basham, A. L. (2005) ''The wonder that was India'', Picador. Pp. 572. {{ISBN|0-330-43909-X}}, p. 110.</ref> ১৩৩৯ সালে শাহ মীর কাশ্মীরের প্রথম মুসলমান শাসক হন এবং সালতিন-ই-কাশ্মীর বা শাহ মীর রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন।<ref name=imp-gazet-history>''Imperial Gazetteer of India, volume 15''. 1908. Oxford University Press, Oxford and London. pp. 93–95.</ref> কাশ্মীর ১৫৮৬ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত [[মুঘল সাম্রাজ্য]]ের অংশ ছিল,<ref name=":1" /> এবং পরে ১৮২০ সাল পর্যন্ত আফগান দুররানি সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।<ref name=imp-gazet-history/> এই বছর রঞ্জিত সিঙের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মীর দখল করে।<ref name=imp-gazet-history/> ১৮৪৬ সালে প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে শিখরা পরাজিত হয় এবং জম্মুর রাজা গুলাব সিং অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই অঞ্চল ক্রয় করে কাশ্মীরের নতুন শাসক হন। তার উত্তরসূরিরা ব্রিটিশদের অধীনে এই অঞ্চলের শাসন করে ১৯৪৭ সালে [[ভারত বিভাজন]]ের পূর্ব পর্যন্ত। ভারত বিভাজনের পর সাবেক ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের এই রাজ্যটি অমীমাংসিত অঞ্চলে পরিণত হয় এবং বর্তমানে এটি তিনটি দেশ কর্তৃক শাসিত হচ্ছে, দেশ তিনটি হল [[ভারত]], [[পাকিস্তান]] ও [[গণচীন|চীন]]।<ref name=britannica-intro/><ref name=bbc-intro/>
১৮২০ সালে মহারাজ রঞ্জজিত সিং কাশ্মীরকে শিখ সাম্রাজ্যভুক্তি করে । ১৮৪৬ সালে, প্রথম অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধে শিখদের পরাজয়ের পর এবং অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই অঞ্চল কেনার পর, জম্মুর রাজা গুলাব সিং কাশ্মীরের নতুন শাসক হন। তার বংশধরদের শাসন, ব্রিটিশ রাজত্বের অধীনে, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। ভারত ভাগের পর ভারত, পাকিস্তান ও চীন এই তিন দেশই এর কিছু বা সম্পূর্ণ অংশের স্বত্ব দাবী করে, ফলে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের প্রাক্তন রাজকীয় রাজ্যটি একটি বিতর্কিত অঞ্চলে পরিণত হয়।
[১ম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে কাশ্মীর অঞ্চল হিন্দুধর্ম ও পরে বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে, পরে নবম শতাব্দীতে কাশ্মীর শাইভিবাদের উত্থান ঘটে।<ref>Basham, A. L. (2005) ''The wonder that was India'', Picador. Pp. 572. {{ISBN|0-330-43909-X}}, p. 110.</ref> ১৩৩৯ সালে শাহ মীর কাশ্মীরের প্রথম মুসলমান শাসক হন এবং সালতিন-ই-কাশ্মীর বা শাহ মীর রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন।<ref name="imp-gazet-history">''Imperial Gazetteer of India, volume 15''. 1908. Oxford University Press, Oxford and London. pp. 93–95.</ref> কাশ্মীর ১৫৮৬ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত [[মুঘল সাম্রাজ্য]]ের অংশ ছিল,<ref name=":1" /> এবং পরে ১৮২০ সাল পর্যন্ত আফগান দুররানি সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।<ref name="imp-gazet-history" /> এই বছর রঞ্জিত সিঙের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মীর দখল করে।<ref name="imp-gazet-history" /> ১৮৪৬ সালে প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে শিখরা পরাজিত হয় এবং জম্মুর রাজা গুলাব সিং অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই অঞ্চল ক্রয় করে কাশ্মীরের নতুন শাসক হন। তার উত্তরসূরিরা ব্রিটিশদের অধীনে এই অঞ্চলের শাসন করে ১৯৪৭ সালে [[ভারত বিভাজন]]ের পূর্ব পর্যন্ত। ভারত বিভাজনের পর সাবেক ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের এই রাজ্যটি অমীমাংসিত অঞ্চলে পরিণত হয় এবং বর্তমানে এটি তিনটি দেশ কর্তৃক শাসিত হচ্ছে, দেশ তিনটি হল [[ভারত]], [[পাকিস্তান]] ও [[গণচীন|চীন]]।<ref name="britannica-intro" /><ref name="bbc-intro" />]


==ব্যুৎপত্তি==
==ব্যুৎপত্তি==
কাশ্মীর নামটি [[সংস্কৃত ভাষা|সংস্কৃত]] শব্দ 'কাশ্মীরা' থেকে উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয় । [[নীলমত পুরাণ]] অনুসারে সতী-সরস নামক হ্রদ থেকে এই উপত্যকার উৎপত্তি ঘটে।<ref name="Akbar1991">{{citation |last=আকবর |first=এম. জে. |title=Kashmir, behind the vale |url=https://books.google.com/books?id=XURuAAAAMAAJ |year=১৯৯১ |publisher=ভাইকিং |p=৯}}</ref><ref name="Raina2013">{{citation|last=রাইনা |first=মোহিনী কসবা |title=Kashur The Kashmiri Speaking People|url=https://books.google.com/books?id=5cXqAQAAQBAJ&pg=PA3|date=২০১৩|publisher=ট্রাফোর্ড পাবলিশিং |isbn=978-1-4907-0165-3|pages=৩–}}</ref> স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে ''কাশ্মীর'' শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল 'জল থেকে উদ্ভূত ভূমি'।<ref name="Snedden2015">{{citation|last=স্নেডেন|first=ক্রিস্টোফার|title=Understanding Kashmir and Kashmiris|url=https://books.google.com/books?id=s5KMCwAAQBAJ&pg=PA22|year=২০১৫|publisher=অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস|isbn=978-1-84904-342-7|pages=২২–}}</ref>
''কাশ্মীর'' শব্দটি প্রাচীন [[সংস্কৃত ভাষা]] থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং যাকে ''{{IAST|káśmīra}}'' নামে অভিহিত করা হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://dsalsrv02.uchicago.edu/cgi-bin/philologic/getobject.pl?c.0:1:2152.soas |শিরোনাম=A Comparative Dictionary of the Indo-Aryan Languages |প্রকাশক=Dsalsrv02.uchicago.edu |সংগ্রহের-তারিখ=১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ |আর্কাইভের-তারিখ=৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160205161051/http://dsalsrv02.uchicago.edu/cgi-bin/philologic/getobject.pl?c.0:1:2152.soas |ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর }}</ref> লোক ভাষ্য মতে কাশ্মীর শব্দটি এসেছে সনাতন ধর্মের পৌরানিক মুনি "কাশ্যপ " এর নাম থেকে।

<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|প্রকাশক=Dsalsrv02.uchicago.edu|শিরোনাম=A Comparative Dictionary of the Indo-Aryan Languages|ইউআরএল=http://dsalsrv02.uchicago.edu/cgi-bin/philologic/getobject.pl?c.0:1:2152.soas|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160205161051/http://dsalsrv02.uchicago.edu/cgi-bin/philologic/getobject.pl?c.0:1:2152.soas|আর্কাইভের-তারিখ=৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬|সংগ্রহের-তারিখ=১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯}}</ref> লোক ভাষ্য মতে কাশ্মীর শব্দটি এসেছে বৈদিক ঋষি "কাশ্যপ " এর নাম থেকে। যিনি এই ভূমিতে মনুষ্য বসতি স্থাপন করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তদনুসারে, কাশ্মীর শব্দটি এসেছে ''কাশ্যপের হ্রদ'' অথবা ''কাশ্যপের পর্বত'' শব্দ থেকে।

কাশ্মীর একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থের মন্ত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়, যেটিতে কাশ্মীর ভূমিতে অবস্থানরত দেবী সারদার স্তুতি করা হয়েছে। যা ''[[সারদা পীঠ]]'' নামক তীর্থ স্থানের উল্লেখ হতে পারে।

প্রাচীন গ্রীকরা এই অঞ্চলটিকে ''কাস্পেরিয়া'' নামে অভিহিত করত। মিলিতাসের হেকাটেয়াস (বাইজান্টিয়ামের আপুড স্টেফানাস) এবং হেরোডোটাসের কাসপাটাইরোস (3.102, 4.44) নামে যে স্থানের উল্লেখ করা হয়েছে এটি গ্রীক উচ্চারনে কাশ্মীর শব্দেরই নামান্তর ভাবা হয়। টলেমির কাসপিরিয়া দেশ বলতে কাশ্মীরকেই বুঝানো হয়েছে।

প্রাচীনতম পান্ডুলিপি যা সরাসরি কাশ্মীর নামটির উল্লেখ করে তা হল খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ পাণিনি রচিত অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থে। পাণিনি কাশ্মীরের জনগণকে কাশ্মীরিকা বলে অভিহিত করেন।

সভা পর্বে মহাভারতে এবং মৎস্য পুরাণ, বায়ু পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ প্রভৃতি পুরাণগুলিতে কাশ্মীরের আরও কিছু প্রাথমিক উল্লেখ পাওয়া যায়।

বৌদ্ধ পণ্ডিত এবং চীনা ভ্রমণকারী হুয়েনসাং কাশ্মীরকে কিয়া-শি-মিলো নামে অভিহিত করেছেন, অন্যদিকে কিছু চীনা বর্ণনা কাশ্মীরকে কি-পিন (বা চিপিন বা জিপিন) এবং আচে-পিন বলে উল্লেখ করেছে। কাশ্মীরকে ফরাসি ভাষায় ক্যাচেমাইরা, স্প্যানিশ ভাষায় ক্যাচেমিরা, পর্তুগিজ ভাষায় ক্যাসেমিরা, কাতালান ভাষায় ক্যাক্সমির, ল্যাটিন ভাষায় ক্যাসমেরিয়া, রোমানিয়ান ভাষায় ক্যাশমির এবং অক্সিটানে কাশ্মির বলা হয়।

কাশ্মীরি ভাষায়, কাশ্মীর নিজেই কাশির নামে পরিচিত।


[[নীলমত পুরাণ]] অনুসারে ''সতী-সরস'' নামক হৃদের পানি থেকে এই উপত্যকার উৎপত্তি ঘটে।<ref name="Akbar1991">{{citation |last=আকবর |first=এম. জে. |title=Kashmir, behind the vale |url=https://books.google.com/books?id=XURuAAAAMAAJ |year=১৯৯১ |publisher=ভাইকিং |p=৯}}</ref><ref name="Raina2013">{{citation|last=রাইনা |first=মোহিনী কসবা |title=Kashur The Kashmiri Speaking People|url=https://books.google.com/books?id=5cXqAQAAQBAJ&pg=PA3|date=২০১৩|publisher=ট্রাফোর্ড পাবলিশিং |isbn=978-1-4907-0165-3|pages=৩–}}</ref> অনিশ্চিত এক জনশ্রুতি অনুসারে ''কাস্‌মীর'' শব্দের স্থানীয় ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল পানি থেকে উদ্ভূত ভূমি।<ref name="Snedden2015">{{citation|last=স্নেডেন|first=ক্রিস্টোফার|title=Understanding Kashmir and Kashmiris|url=https://books.google.com/books?id=s5KMCwAAQBAJ&pg=PA22|year=২০১৫|publisher=অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস|isbn=978-1-84904-342-7|pages=২২–}}</ref>


==ইতিহাস==
==ইতিহাস==

০৫:১৫, ৮ মার্চ ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

রাজনৈতিক মানচিত্র: কাশ্মীর অঞ্চলের জেলাসমূহ, পীর পঞ্জল পর্বতমালা, এবং কাশ্মীর উপত্যকা
নবম-সর্বোচ্চ: নঙ্গ পর্বত, আরোহণের জন্য মারাত্মক একটি পর্বত, এটি পাকিস্তানে গিলগিট-বালতিস্তানের কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থিত।

কাশ্মীর হল ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরপশ্চিমের একটি অঞ্চল। ১৯শ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, কাশ্মীর শব্দটি ভৌগোলিকভাবে শুধু গিরিরাজ হিমালয় এবং পীর পঞ্জল পর্বতমালার উপত্যকাকে নির্দেশনা করা হতো। আজ কাশ্মীর বলতে বোঝায় একটি বিশাল অঞ্চল যা ভারতীয়-শাসিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ, পাকিস্তানি-শাসিত গিলগিত-বালতিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীর প্রদেশ এবং চীন-শাসিত আকসাই চীন এবং ট্রান্স-কারাকোরাম ট্রাক্ট অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত।[][][]

১৮২০ সালে মহারাজ রঞ্জজিত সিং কাশ্মীরকে শিখ সাম্রাজ্যভুক্তি করে । ১৮৪৬ সালে, প্রথম অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধে শিখদের পরাজয়ের পর এবং অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই অঞ্চল কেনার পর, জম্মুর রাজা গুলাব সিং কাশ্মীরের নতুন শাসক হন। তার বংশধরদের শাসন, ব্রিটিশ রাজত্বের অধীনে, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। ভারত ভাগের পর ভারত, পাকিস্তান ও চীন এই তিন দেশই এর কিছু বা সম্পূর্ণ অংশের স্বত্ব দাবী করে, ফলে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের প্রাক্তন রাজকীয় রাজ্যটি একটি বিতর্কিত অঞ্চলে পরিণত হয়।


[১ম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে কাশ্মীর অঞ্চল হিন্দুধর্ম ও পরে বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে, পরে নবম শতাব্দীতে কাশ্মীর শাইভিবাদের উত্থান ঘটে।[] ১৩৩৯ সালে শাহ মীর কাশ্মীরের প্রথম মুসলমান শাসক হন এবং সালতিন-ই-কাশ্মীর বা শাহ মীর রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন।[] কাশ্মীর ১৫৮৬ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল,[] এবং পরে ১৮২০ সাল পর্যন্ত আফগান দুররানি সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।[] এই বছর রঞ্জিত সিঙের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মীর দখল করে।[] ১৮৪৬ সালে প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে শিখরা পরাজিত হয় এবং জম্মুর রাজা গুলাব সিং অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই অঞ্চল ক্রয় করে কাশ্মীরের নতুন শাসক হন। তার উত্তরসূরিরা ব্রিটিশদের অধীনে এই অঞ্চলের শাসন করে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পূর্ব পর্যন্ত। ভারত বিভাজনের পর সাবেক ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের এই রাজ্যটি অমীমাংসিত অঞ্চলে পরিণত হয় এবং বর্তমানে এটি তিনটি দেশ কর্তৃক শাসিত হচ্ছে, দেশ তিনটি হল ভারত, পাকিস্তানচীন[][]]

ব্যুৎপত্তি

কাশ্মীর নামটি সংস্কৃত শব্দ 'কাশ্মীরা' থেকে উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয় । নীলমত পুরাণ অনুসারে সতী-সরস নামক হ্রদ থেকে এই উপত্যকার উৎপত্তি ঘটে।[][] স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে কাশ্মীর শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল 'জল থেকে উদ্ভূত ভূমি'।[]

[১০] লোক ভাষ্য মতে কাশ্মীর শব্দটি এসেছে বৈদিক ঋষি "কাশ্যপ " এর নাম থেকে। যিনি এই ভূমিতে মনুষ্য বসতি স্থাপন করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তদনুসারে, কাশ্মীর শব্দটি এসেছে কাশ্যপের হ্রদ অথবা কাশ্যপের পর্বত শব্দ থেকে।

কাশ্মীর একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থের মন্ত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়, যেটিতে কাশ্মীর ভূমিতে অবস্থানরত দেবী সারদার স্তুতি করা হয়েছে। যা সারদা পীঠ নামক তীর্থ স্থানের উল্লেখ হতে পারে।

প্রাচীন গ্রীকরা এই অঞ্চলটিকে কাস্পেরিয়া নামে অভিহিত করত। মিলিতাসের হেকাটেয়াস (বাইজান্টিয়ামের আপুড স্টেফানাস) এবং হেরোডোটাসের কাসপাটাইরোস (3.102, 4.44) নামে যে স্থানের উল্লেখ করা হয়েছে এটি গ্রীক উচ্চারনে কাশ্মীর শব্দেরই নামান্তর ভাবা হয়। টলেমির কাসপিরিয়া দেশ বলতে কাশ্মীরকেই বুঝানো হয়েছে।

প্রাচীনতম পান্ডুলিপি যা সরাসরি কাশ্মীর নামটির উল্লেখ করে তা হল খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ পাণিনি রচিত অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থে। পাণিনি কাশ্মীরের জনগণকে কাশ্মীরিকা বলে অভিহিত করেন।

সভা পর্বে মহাভারতে এবং মৎস্য পুরাণ, বায়ু পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ প্রভৃতি পুরাণগুলিতে কাশ্মীরের আরও কিছু প্রাথমিক উল্লেখ পাওয়া যায়।

বৌদ্ধ পণ্ডিত এবং চীনা ভ্রমণকারী হুয়েনসাং কাশ্মীরকে কিয়া-শি-মিলো নামে অভিহিত করেছেন, অন্যদিকে কিছু চীনা বর্ণনা কাশ্মীরকে কি-পিন (বা চিপিন বা জিপিন) এবং আচে-পিন বলে উল্লেখ করেছে। কাশ্মীরকে ফরাসি ভাষায় ক্যাচেমাইরা, স্প্যানিশ ভাষায় ক্যাচেমিরা, পর্তুগিজ ভাষায় ক্যাসেমিরা, কাতালান ভাষায় ক্যাক্সমির, ল্যাটিন ভাষায় ক্যাসমেরিয়া, রোমানিয়ান ভাষায় ক্যাশমির এবং অক্সিটানে কাশ্মির বলা হয়।

কাশ্মীরি ভাষায়, কাশ্মীর নিজেই কাশির নামে পরিচিত।


ইতিহাস

হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম

শাহ মীর রাজবংশ

শামস-উদ-দীন শাহ মীর (শাসনকাল ১৩৩৯-৪২) ছিলেন কাশ্মীরের প্রথম মুসলমান শাসক এবং শাহ মীর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা।

মুঘল শাসনামল

মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৮৫-৮৬ সালে কাশ্মীরের আন্তঃ সুন্নী-শিয়া বিভাজনের সুযোগ দিয়ে কাশ্মীর জয় করেন।

আফগান শাসনামল

আফগান দুররানি রাজবংশ ১৭৫১ সাল থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।

শিখ শাসনামল

১৮১৯ সালে কাশ্মীর উপত্যকা দুররানি সাম্রাজ্যের হাত থেকে পাঞ্জাবের রঞ্জিত সিঙের অধীনে শিখদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

করদ রাজ্য

১৯৪৭ ও ১৯৪৮

বর্তমান অবস্থা ও রাজনৈতিক বিভাজন

কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থা খুব ভালো নাই ।

কাশ্মীরের সংস্কৃতি

কাশ্মীরের সংস্কৃতি ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাঞ্চলে বসবাসকারী কাশ্মীরি জনগণের কথ্য ভাষা, লিখিত সাহিত্য, রন্ধনপ্রণালী, স্থাপত্য, ঐতিহ্য এবং ইতিহাস নিয়ে গঠিত। কাশ্মীরে ইসলামি আগ্রাসনের পর কাশ্মীরের সংস্কৃতি পারস্যের পাশাপাশি মধ্য এশিয়ার সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। কাশ্মীরি সংস্কৃতি হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধ এবং পরবর্তীতে ইসলাম দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত।

আরও পড়ুনঃ https://bn.wikipedia.org/s/ppns (কাশ্মীরের সংস্কৃতি)

তথ্যসূত্র

  1. "Kashmir: region, Indian subcontinent"এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  2. "Kashmir territories profile" (ইংরেজি ভাষায়)। বিবিসি নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  3. "Kashmir profile—timeline" (ইংরেজি ভাষায়)। বিবিসি নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  4. Basham, A. L. (2005) The wonder that was India, Picador. Pp. 572. আইএসবিএন ০-৩৩০-৪৩৯০৯-X, p. 110.
  5. Imperial Gazetteer of India, volume 15. 1908. Oxford University Press, Oxford and London. pp. 93–95.
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; :1 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. আকবর, এম. জে. (১৯৯১), Kashmir, behind the vale, ভাইকিং, পৃষ্ঠা ৯ 
  8. রাইনা, মোহিনী কসবা (২০১৩), Kashur The Kashmiri Speaking People, ট্রাফোর্ড পাবলিশিং, পৃষ্ঠা ৩–, আইএসবিএন 978-1-4907-0165-3 
  9. স্নেডেন, ক্রিস্টোফার (২০১৫), Understanding Kashmir and Kashmiris, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, পৃষ্ঠা ২২–, আইএসবিএন 978-1-84904-342-7 
  10. "A Comparative Dictionary of the Indo-Aryan Languages"। Dsalsrv02.uchicago.edu। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ