বিষয়বস্তুতে চলুন

গুহ্যেশ্বরী মন্দির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা ব্যা করণ (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:৪৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

গুহ্যেশ্বরী মন্দির
গুহ্যেশ্বরী মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বার
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাকাঠমান্ডু জেলা
অবস্থান
অবস্থানকাঠমান্ডু জেলা
দেশনেপাল
স্থাপত্য
ধরনPagoda
শিলালিপিপ্রতাপ মল্লের শিলালিপি, পৃথিবীনারায়ণ শাহ

গুহ্যেশ্বরী মন্দির (নেপালি: गुह्येश्वरी मन्दिर) নেপালের কাঠমাণ্ডুতে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র মন্দিরগুলোর একটি। এটি আদিশক্তি বা মহাশক্তির মন্দির। মন্দিরটি পশুপতিনাথ মন্দির এর নিকটে অবস্থিত এবং একটি শক্তিপীঠ। কথিত আছে গুহ্যেশ্বরী মন্দিরটি পশুপতিনাথ মন্দিরের শক্তি। ১৭শ শতকে রাজা প্রতাপ মল্ল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরের দেবী গুহ্যকালী নামেও পরিচিতা। এটি গুহ্যেশ্বরী দেবীর প্রধান মন্দির। হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষত তান্ত্রিকদের কাছে মন্দিরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ।

নামের অর্থ ও উৎপত্তি

সংস্কৃত শব্দ ‘গুহ্য’ ও ‘ঈশ্বরী’ সন্ধিযুক্ত হয়ে গুহ্যেশ্বরী নামটি গঠন করেছে। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ এর ললিতা সহস্রনাম অধ্যায়ের ললিতা দেবীর উল্লিখিত সহস্র নামের মধ্যে ৭০৭ তম নামটি হচ্ছে “গুহ্যরূপিণী” যার অর্থ যে দেবীর মাহাত্ম্য মানুষের উপলব্ধির বাইরে এবং যা গুপ্ত। মতান্তরে নামটি ষোড়শী মন্ত্রের ষোড়শ অক্ষর হতে উদ্ভূত।(LS 137th verse: Sarasvati shastramayi| Guhaamba guhyaruupini||).[]

হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী সতীর দেহ নিয়ে দুঃখার্ত শিব যখন বিশ্বে ভ্রমণ করছিলেন তখন সতীর শবদেহ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে শক্তিপীঠগুলোয় পতিত হয়। গুহ্যেশ্বরী মন্দিরটি বাগমতী নদীর তীরে এবং পশুপতিনাথ মন্দিরের প্রাং ১ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।[]

গুহ্যেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ

গুহ্যেশ্বরী দেবীর প্রধান স্তোত্রসমূহ

  1. গুহ্যকালী সহস্রনাম স্তোত্র
  2. গুহ্যকালী গদ্য সঞ্জীবন স্তোত্র
  3. গুহ্যকালী মহাবজ্র কবচ স্তোত্র

শক্তিপীঠ গুহ্যেশ্বরী

সতীর শব কাঁধে শিব

প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে দক্ষযজ্ঞ ও সতীর আত্মাহুতির উপাখ্যানের একটি ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। এই পৌরাণিক আখ্যাটি শক্তিপীঠ এর মূল এবং শাক্তধর্ম এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুরাণসমূহে উল্লিখিত বহুসংখ্যক কাহিনিতে দক্ষযজ্ঞকে শক্তিপীঠের মূল কারণরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। শিবের প্রথম পত্নী সতীদেবীর উদ্দেশ্যে নির্মিত গুহ্যেশ্বরী মন্দিরটি ১৭শ শতকে রাজা প্রতাপ মল্ল নির্মাণ করেন এবং এটিকে হিন্দুধর্মের একটি পবিত্র তীর্থরূপে বিবেচনা করা হয়। দক্ষ যখন শিবের নিন্দা করেন তখন সতী অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে যজ্ঞের আগুনে ঝাঁপ দেন। এই ঘটনা থেকেই সতীদাহ বা আত্মাহুতির চর্চা শুরু হয়েছিল। শোকবাণে জর্জরিত শিব, সতীর মুতদেহ কাঁধে নিয়ে পৃথিবী পরিক্রমণ শুরু করেন এবং সতীর শবদেহ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পতিত হয়। গুহ্যেশ্বরী মন্দিরটি যেখানে অবস্থিত, সেখানে দেবীর যোনি পতিত হয়েছিল (মতান্তরে দুই হাঁটু)। গুহ্য শব্দের মানে ‘যোনি’ আর ঈশ্বরী হলেন ‘দেবী’। দেবী, মন্দিরের কেন্দ্রে একটি কলসে পূজিত হন। কলসটি স্বর্ণরৌপ্য এর স্তর দ্বারা আবৃত। মূল মন্দিরটি একটি খোলা প্রাঙ্গণের কেন্দ্রে অবস্থিত। এর চূড়ায় চারটি সোনালি সর্প আছে যা বিবিধ কারুকাজের ভিত্তি হয়ে রয়েছে।

শক্তিপীঠগুলো মাতৃরূপা দেবীর মন্দির। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই মন্দিরগুলোতে শক্তি বা আদিশক্তি বিরাজিত থাকেন। এর কারণ শিব যখন শোকাকুল অবস্থায় সতীর মৃতদেহ নিয়ে আর্যাবর্ত ঘুরে বেড়ান, তখন সতীর শবদেহের অংশগুলো শক্তিপীঠগুলোয় নিপতিত হয়। সংস্কৃত বর্ণমালার ৫১টি প্রতীক দ্বারা চিহ্নিত মোট ৫১টি শক্তিপীঠ রয়েছে। প্রতিটি পীঠস্থানে শক্তি ও ভৈরবের পৃথক মন্দির আছে। গুহ্যেশ্বরী মন্দিরের শক্তি হলেন ‘মহাশিরা’ আর ভৈরব ‘কাপালী’। এই মন্দিরটি তান্ত্রিকদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানে বিবিধ তান্ত্রিক ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। তন্ত্রশক্তি লাভের জন্য এই মন্দিরটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে কালীতন্ত্র, চণ্ডীতন্ত্র ও শিবতন্ত্ররহস্য গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। গুহ্যেশ্বরী দেবীর বিশ্বরূপ মূর্তিতে তাঁকে বিভিন্ন বর্ণের একাধিক মুখমণ্ডলবিশিষ্ট রূপে দেখা যায়। দেবীর হাতের সংখ্যা অসংখ্য। বিজয়া দশমীনবরাত্রির সময় মন্দিরে প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়। [][][]

বজ্রযান বৌদ্ধতন্ত্র

নব বজ্রযান বৌদ্ধগণ গুহ্যেশ্বরীকে বজ্রবারাহী রূপে পবিত্র বজ্রযোগিনী দেবী হিসেবে বিবেচনা করেন যার অবস্থান স্বয়ম্ভূনাথ স্তূপ ধারণকারী পৌরাণিক পদ্মের মূলে এবং যা কাঠমাণ্ডুর প্রাকৃতিক নাভিরজ্জু। তিব্বত এ স্থানটিকে পাকমো ন্ গুলচু (বারাহীর গর্ভতরল) বলা হয় এবং মন্দিরের কূপের ঝরনা হতে উৎসারিত জলের প্রবাহকে বজ্রবারাহীর যোনিরস বলে বিশ্বাস করা হয়।[]

তথ্যসূত্র

  1. "Shakti Sadhana Org: : LalithA SahasranAma"। shaktisadhana.50megs.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-২৫ 
  2. "Kathmandu page 4"। virtualtraveling.endesign.nl। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-২৫ 
  3. (Translator), F. Max Muller (জুন ১, ২০০৪)। The Upanishads, Vol I। Kessinger Publishing, LLC। আইএসবিএন 1419186418 
  4. (Translator), F. Max Muller (জুলাই ২৬, ২০০৪)। The Upanishads Part II: The Sacred Books of the East Part Fifteen। Kessinger Publishing, LLC। আইএসবিএন 1417930160 
  5. "Kottiyoor Devaswam Temple Administration Portal"http://kottiyoordevaswom.com/। Kottiyoor Devaswam। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩  |work= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  6. Dowman, Keith (২০০৭)। A Buddhist Guide to the Power Places of the Kathmandu Valley। Kathmandu: Vajra Publications। পৃষ্ঠা 59-60। আইএসবিএন 978-9937-506-02-1 

টেমপ্লেট:Hindu temples in Nepal টেমপ্লেট:Famous Shiva temples