বিষয়বস্তুতে চলুন

অশ্বত্থামা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা Akashdeep dasgupta (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৩০, ১৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

অশ্বত্থামা
Ashwatthama
অশ্বত্থামা নারায়ণস্ত্র ব্যবহার করছে
পূর্ণ নামদ্রৌনি (জন্ম নাম)
অস্ত্রতীর-ধনুক, তলোয়ার
পরিবারদ্রোণাচার্য (পিতা)
কৃপি (মাতা)
আত্মীয়কৃপাচার্য (মামা)
ভরদ্বাজ (পিতামহ)

অশ্বত্থামা (সংস্কৃত:अश्वत्थामा) হল গুরু দ্রোণাচার্য ও কুলগুরু কৃপাচার্যের বোন কৃপির পুত্র। তিনি ছিলেন মহাভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র । তিনি ঋষি ভরদ্বাজের নাতি ছিলেন। অশ্বত্থামা হস্তিনাপুরের শাসকদের অধীনস্থ হয়ে অহিছত্রকে রাজধানী করে পাঞ্চালার উত্তরাঞ্চল শাসন করেছিলেন। তিনি ছিলেন মহারথী,[]  যিনি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে কৌরবের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। ভগবান শিব দ্বারা আশীর্বাদ পেয়ে তিনি চিরঞ্জীবী (অমর) হয়েছিলেন। অশ্বত্থামার কথিত মৃত্যুর প্রতারণামূলক চক্রান্ত তার শোকার্ত পিতা দ্রোণকে বধ করা হয়। তিনি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৌরবদের চূড়ান্ত সেনাপতি নিযুক্ত হন। শোক ও ক্রোধে কাবু হয়ে তিনি এক রাতের আক্রমণে পাণ্ডব শিবিরে উপস্থিত সমস্ত যোদ্ধাদের বধ করেন। তিনি মহাভারতের সবচেয়ে বিশিষ্ট যোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন।

জন্ম

অশ্বত্থামা এর পিতার নাম গুরু দ্রোণ আর তার মাতার নাম কৃপী। তিনি একটি বনের গুহায় জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমানে তপকেশ্বর মহাদেব মন্দির, দেরাদুন। উত্তরাখণ্ড)। দ্রোণ ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করার জন্য বহু বছর ধরে কঠোর তপস্যা করেন যাতে ভগবান শিবের মতো পরাক্রমশালী পুত্র লাভ করেন। অশ্বত্থামা তার কপালে একটি মূল্যবান এবং শক্তিশালী রত্ন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন প্রভু শিব এর আশীর্বাদ হিসাবে যা তাকে মানুষের চেয়ে নীচের সমস্ত জীবের উপর ক্ষমতা দেয়; এটি তাকে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি, বার্ধক্য এবং সকল প্রকার রোগ, অস্ত্র এবং দেবতাদের থেকে রক্ষা করে। ঐশ্বরিক রত্নটি প্রায় অশ্বত্থামাকে অজেয় এবং অমর করে তোলে। জন্মের সময় অশ্বত্থামা অশ্বের মত শব্দ করেছিলেন বলে তার এইরূপ নামকরণ করা হয়।

যুদ্ধ শিক্ষা

অশ্বত্থামার পিতা গুরু দ্রোণ ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ হয়েও তিনি ক্ষত্রিয়ের মতো যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি তার যুদ্ধ শিক্ষা শেখেন তার পিতা ভরদ্দাজ মুণির কাছ থেকে। তার পিতার দেওয়া শিক্ষাই তিনি তার ছাত্রদের শেখাতেন। যারা ব্রাহ্মণ কুলে জন্মগ্রহণ করে একই সাথে ব্রাহ্মণ্য এবং ক্ষাত্রধর্ম পালন করে, তাদের ব্রহ্মক্ষত্রিয় বলা হয়। এজন্য পরশুরামের মত এদেরকেও ব্রহ্মক্ষত্রিয় বলা হয়। একবার তার বাল্যকালের মিত্র রাজা দ্রুপদের কাছে গেলে তিনি গুরু দ্রোণকে অপমান করেন। আর সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে তিনি হস্তিনাপুরে এসে তার যোগ্য শিষ্য খুঁজতে থাকেন। সেখানে তিনি কৌরব কুমারদের সাথে তার একমাত্র পুত্র অশ্বত্থামাকে যুদ্ধ শিক্ষা দিতে আরম্ভ করেন। গুরু দ্রোন দেখতে পেলেন সেখানে ধনু বিদ্যাতে অর্জুন বিশেষ দক্ষতা অর্জন করছে, তাই তিনি তার পুত্র অশ্বত্থামাকে সেরা ধনুর্বি‌দ হবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। অশ্বত্থামা বহু গুপ্ত অস্ত্র প্রয়োগের কৌশল পিতার কাছ থেকে শিখেছিলেন। [][]

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ও অশ্বত্থামা

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ এ অশ্বত্থামা কৌরবদের পক্ষ অবলম্বন করেন। আর তার পিতা গুরু দ্রোণ তার ছেলে অশ্বত্থামার স্নেহের কারণে কৌরবদের পক্ষে থাকেন। এই কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে অশ্বত্থামার বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি পাণ্ডবদের বহু সেনা হত্যা করেন। তাকে বধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দ্রোণাচার্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলে দ্রোণকে বধ করার জন্য পাণ্ডবগণ শ্রীকৃষ্ণের সাথে পরামর্শ করেন। আর তখন শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের বলেন কোন ভাবে যদি গুরু দ্রোণের কানে অশ্বত্থামার মৃত্যুর খবর পোঁছানো যায় তাহলে সে সময় ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করবে। শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ‌ মতো ভীম পাণ্ডবপক্ষের ইন্দ্রবর্মার অশ্বত্থামা নামক হাতিকে হত্যা করেন। আর সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন যুধিষ্ঠির। আর একমাত্র গুরু দ্রোণ যুধিষ্ঠিরের কথাকে বিশ্বাস করবেন। তাই যুধিষ্ঠির দ্রোণের উদ্দেশ্যে 'অশ্বত্থামা হতঃ- ইতি গজ' (অশ্বত্থামানামক হাতী নিহত হয়েছে) বাক্য উচ্চারণ করেন। ইতি গজ শব্দটি আস্তে বলাতে দ্রোণাচার্য মনে করেন যে তার পুত্র অশ্বত্থামার মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এরপর দ্রোণাচার্য অস্ত্র ত্যাগ করলে ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করেন। আর তাতে অশ্বত্থামা ভীষন খেপে যায়। []

শেষ জীবনে অশ্বত্থামা

অর্জুন কর্তৃক কর্ণের মৃত্যুর পরে দুর্যোধন অশ্বত্থামাকে সেনাপতি নিয়োগ করেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে যখন দুর্যোধনসহ কৌরবদের সবাই মারা যায় তখন শেষ সময়ে এসে অশ্বত্থামা দুর্যোধনকে বলেন কি করলে দুর্যোধন মৃত্যু কালে খুশিতে মৃত্যু বরণ করতে পারবেন। আর তার উত্তরে দুর্যোধন বলেন তিনি পাণ্ডবদের বংশকে নিশ্চিহ্ন দেখতে চান। তার মিত্রের কথা রক্ষার জন্য অশ্বত্থামা সাথে সাথে পাণ্ডবদের শিবিরে গমন করেন। তার সাথে ছিলেন কৌরবপক্ষীয় জীবিত আর দুইজন, কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা। রাত্রে অশ্বত্থামা দেখেন গাছের ডালে কাকের বাসাকে প্যাঁচা আক্রমণ করছে। তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় পাণ্ডবদের হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। কৃপ আর কৃত এই নীচ কাজে আপত্তি জানালেও অশ্বত্থামা শুনলেন না। তারা শিবিরে গিয়ে ধৃষ্টদ্যুম্নকে দেখা মাত্র হত্যা করেন। তারপরে অশ্বত্থামা দ্রৌপদীর পাঁচ ঘুমন্ত পুত্রকে, শিখণ্ডী ও অন্যান্য পাণ্ডব বীরদের হত্যা করেন। উল্লেখ্য, এই সময় পঞ্চপাণ্ডব, কৃষ্ণ গঙ্গাতীরে অবস্থান করছিলেন। তারা এই খবর পেলে অশ্বত্থামা পলায়ন করেন। পুত্রশোকাহত দ্রৌপদীকে শান্ত করতে তাকে যেকোনো প্রকারে বধ করতে যান অর্জুন। তাদের দেখে অশ্বত্থামা শক্তিশালী ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগ করলে অর্জুন বাধ্য হন ব্রহ্মশির দিয়ে ব্রহ্মশির প্রতিরোধ করতে। বাসুদেবের মধ্যস্থতায় বিপর্যয় নিবৃত্ত হয় কিন্তু সেটা গিয়ে উত্তরার গর্ভে থাকা সন্তানের উপর পড়ে।

অশ্বত্থামার শাস্তি

অশ্বত্থামার এই পাপের সাজা হিসেবে তার কাছ থেকে শ্রীকৃষ্ণ তার মাথার মনিটি কেড়ে নেন। যা ছিল তার বীরত্ব ও গৌরবের প্রতীক। অভিশাপ দেন যে কখনো অশ্বত্থামার মৃত্যু হবে না। অশ্বত্থামা চাইলেও কোনদিন মৃত্যুবরণ করতে পারবেন না। আজীবন অমর থাকবেন।[] এই ঘটনার পর অশ্বত্থামাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। তিনি মনিহারা শৌর্যহারা হয়ে চলে যান।

সাহিত্য

সপ্ত চিরঞ্জীবী স্তোত্রম হল একটি মন্ত্র যা হিন্দু সাহিত্যে বৈশিষ্ট্যযুক্ত :

अश्वत्थामा बलिर्व्यासो हनुमांश्च विभीषण:।
कृप: परशुरामश्च सप्तैतै चिरजीविन:॥
सप्तैतान् संस्मरेन्नित्यं मार्कण्डेयमथाष्टमम्।
जीवेद्वर्षशतं सोपि सर्वव्याधिविवर्जितः॥

aśvatthāmā balirvyāsō hanumāṁśca vibhīṣaṇaḥ |
kṛpaḥ paraśurāmaśca saptaitē cirañjīvinaḥ ||
saptaitān saṁsmarēnnityaṁ mārkaṇḍēyamathāṣṭamam |

jīvēdvarṣaśataṁ prājñaḥ apamṛtyuvivarjitaḥ ||

— Sapta Chiranjivi Stotram

মন্ত্রটি বলে যে আটজন অমর (অশ্বত্থামা, মহাবলী, ব্যাস, হনুমান, বিভীষণ, কৃপা, পরশুরাম এবং মার্কণ্ডেয়) স্মরণে একজনকে অসুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু থেকে মুক্তি দেয়।

তথ্যসূত্র

  1. "The Mahabharata, Book 5: Udyoga Parva: Uluka Dutagamana Parva: section CLXVIII"www.sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৪ 
  2. অশ্বত্থামা
  3. দ্রোণাচার্য্য-অশ্বত্থামা সংবাদ
  4. অশ্বত্থামা কর্ত্তৃক কর্ণকে ভর্ৎসনা
  5. যুদ্ধশেষ

বহিঃসংযোগ

Original text online (সংস্কৃত ভাষায়)