গোমূত্র
গোমূত্র হচ্ছে গরুর খাদ্য বিপাক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তরল উপজাত। গোমূত্র ভারত, মায়ানমার, নেপাল ও নাইজেরিয়ায় ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যদিও গোমূত্র ও গোবর সার হিসেবে ভালো, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, গোমূত্রে বিভিন্ন অসুখ ও ক্যান্সার আরোগ্যের দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই।[১][২][৩][৪][৫]
দাবিকৃত উপকার ও ব্যবহার
[সম্পাদনা]ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায়
[সম্পাদনা]ঔষধি পানীয় হিসেবে গোমূত্রের বিশেষ গুরুত্ব আছে বলে কিছু হিন্দু দাবি করে থাকেন।[১][৬] বলা হয়ে থাকে গোমূত্রের ছিটের আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতা গুণও রয়েছে।[৭][৮]
ঐতিহ্যগতভাবে গবাদিপশু ভারতবর্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গৃহাস্থলি সরঞ্জাম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এবং কিছু হিন্দু গরুকে পবিত্র হিসেবে এবং গো হত্যাকারীকে পাপী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।
লোকজ ওষুধ
[সম্পাদনা]প্রাচীন আয়ুর্বেদ ওষুধশাস্ত্রে গোমূত্র চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছিলো।[৯][১০] গর্ভবতী গরুর মূত্রের বিশেষ গুরুত্ব আছে বলে মনে করা হয়; এটিতে বিশেষ হরমোন এবং খনিজ রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।[৯] আয়ুর্বেদের মতে, গোমুত্র (গরুর প্রস্রাব) কুষ্ঠরোগ, জ্বর, পেপটিক আলসার, যকৃতের অসুস্থতা, কিডনির ব্যাধি, হাঁপানি, নির্দিষ্ট অ্যালার্জি, সোরিয়াসিস, রক্তস্বল্পতা, এমনকি ক্যান্সারের মতো অসুখ ও ত্বকের সমস্যাও নিরাময় করতে পারে।[১০][১১] ভারতের বৃহত্তম আয়ুর্বেদিক সংস্থা পাতঞ্জলি আয়ুর্বেদ প্রস্রাব ভিত্তিক পণ্য বিক্রি করে।
গোমূত্র মিয়ানমার এবং নাইজেরিয়ার লোকজ ওষুধ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। নাইজেরিয়ায়, তামাক , রসুন, লেবু, তুলসীর রস, খনিজ লবণ এবং গরুর প্রস্রাবের মিশ্রণ বাচ্চাদের খিঁচুনির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।[১২] এর ফলে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকটি শিশু মারাও গিয়েছিল।[১৩]
মেঝে পরিষ্কারক হিসাবে
[সম্পাদনা]ভারতের হলি কাউ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা গৌনাইল নামে একটি মেঝে পরিষ্কারের তরল বাজারজাত করে।[১৪] মানেকা গান্ধী (ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী) সরকারী অফিসে ফিনাইলের পরিবর্তে মেঝে পরিষ্কারক হিসেবে গৌনাইল ব্যবহারের প্রস্তাব করেছিলেন।[১৫] ২০১৫ এর মে -তে, রাজেন্দ্র সিং রাঠোর, রআজস্থানের মেডিকেল ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জালোরে ₹ ৪০ মিলিয়ন (ইউএস$ ৪,৮৮,৯৩২) রূপির একটি গোমূত্র শোধনাগার উদ্বোধন করে।[১৬][১৭] পার্থভীমদা গো ফার্মা প্রাইভেট লিমিটেড এটি নির্মাণ করে এবং তারা গোক্লিনার নামে একটি মেঝে পরিষ্কারকও উৎপাদন করে।[১৭]
জৈব চাষে
[সম্পাদনা]গোমুত্র ধান উৎপাদনের জন্য সার হিসাবে ব্যবহৃত হয় । Jeevamrutha নামে একটি সার গাভী প্রস্রাব, গোবর , গুড় , ডাল এবং আটার মিশ্রণ থেকে তৈরি করা হয়।[১৮][১৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Dean Nelson (১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "India makes cola from cow urine"। The Daily Telegraph। ৯ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ Andrew Buncombe (২১ জুলাই ২০১০)। "A cure for cancer – or just a very political animal?"। The Independent। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১১।
- ↑ Paliwal, Ankur (৩ মার্চ ২০১৮)। "From cure in cow urine to 'superior child', pseudoscience inviting research"। Business Standard India। ৮ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ – Business Standard-এর মাধ্যমে।
- ↑ RAMACHANDRAN, R.। "Of 'cowpathy' & its miracles"। Frontline।
- ↑ Prabhala, Achal; Krishnaswamy, Sudhir (২০১৬-০৬-১৬)। "Mr. Modi, Don't Patent Cow Urine"। The New York Times। ৮ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ Ben Burrows (১৩ জানুয়ারি ২০১৪)। "Pictured: A very few Indian Hindu worshippers drink COW URINE to help prevent cancer"। Mirror। ৬ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Kamadhenu Sutra"। Outlook India। ১০ মার্চ ২০০৩। ৬ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Teachers "purify" students with cow urine"। Reuters। ২৩ এপ্রিল ২০০৭। ১২ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ ক খ N. H. Sahasrabudhe; R. D. Mahatme (২০০০)। Mystic Science of Vastu। Sterling Publishers Pvt. Ltd। পৃষ্ঠা 68। আইএসবিএন 978-81-207-2206-4। ২৩ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ ক খ T V Sairam (১৬ জানুয়ারি ২০০৮)। The Penguin Dictionary of Alternative Medicine। Penguin Books Limited। পৃষ্ঠা 311। আইএসবিএন 978-93-5118-127-9। ২১ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Cow urine aids treatment of cancer, asthma?"। The Economic Times। ১২ জুলাই ২০১২। ৬ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;CowUrineonToad
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "Don't use cow urine to treat infant epilepsy, Kwara warns mothers"। Premium Times। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "Use cow urine to clean offices, says Maneka Gandhi"। The Times of India। ২৫ মার্চ ২০১৫। ৩০ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ "Cow urine cleaner to replace phenyl in government offices"। India Today। ৯ জানুয়ারি ২০১৫। ১৮ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৫।
- ↑ "Cow-urine refinery inaugurated at Jalore"। Deccan Herald। ৩ মে ২০১৫। ৮ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৫।
- ↑ ক খ "Cow urine to be used to clean Rajasthan government hospitals"। India Today। ৫ মে ২০১৫। ৮ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৫।
- ↑ "Farmer cultivates paddy with cow urine, dung"। The Hindu। ১৩ ডিসেম্বর ২০১২। ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ T. Satyanarayana; Bhavdish Narain Johri; Anil Prakash (২ জানুয়ারি ২০১২)। Microorganisms in Sustainable Agriculture and Biotechnology। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 978-94-007-2214-9। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৫।