বিষয়বস্তুতে চলুন

নারীর প্রতি সহিংসতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, বিশেষত গৃহস্থালি সহিংসতা তীব্র হয়েছে

নারীর প্রতি সহিংসতা বা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে সহিংস অপরাধগুলো যেগুলো প্রধাণত বা কেবলই নারী বা বালিকাদের উপরেই করা হয়। এরকম সহিংসতাকে প্রায়ই ঘৃণাপূর্বক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়,[] যা নারী বা বালিকাদের উপর করা হয় কেননা তারা নারী। নারীর প্রতি সহিংসতার খুব লম্বা ইতিহাস রয়েছে, যদিও এরকম সহিংসতার মাত্রা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছিল, এমনকি আজও বিভিন্ন সমাজে এগুলোর মাত্রা ও ঘটনার ধরন বিভিন্ন হয়। এরকম সহিংসতাকে প্রায়ই নারীকে সমাজে বা আন্তঃব্যক্তি সম্পর্কে অধীনস্থ করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি তার অধিকারপ্রাপ্তির বোধ, উচ্চস্থানের বোধ, নারীবিদ্বেষ, বা নিজের সহিংস প্রকৃতির জন্য নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করতে পারেন।

জাতিসংঘের ডেকলারেশন অন দ্য ডেকলারেশন অফ ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন থেকে বলা হয়, "সহিংসতা হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে নারী ও পুরুষের মধ্যকার ঐতিহাসিক অসম ক্ষমতা সম্পর্কের প্রকাশ" এবং "নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে প্রধান সামাজিক কৌশলগুলোর মধ্যে একটি যার দ্বারা নারীদেরকে পুরুষের তুলনায় অধীনস্থ অবস্থানে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়।"[]

জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনান ২০০৬ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ফর উইমেন (UNIFEM)-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছিলেন:

নারী ও বালিকাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা একটি পৃথিবীব্যাপি বিরাজমান সমস্যা। সমগ্র বিশ্বজুড়ে তিন জন নারীর অন্তত একজনকে মারা হয়েছে, জোরপূর্বক যৌনক্রিয়া করতে বাধ্য করা হয়েছে, বা অন্য কোনভাবে তার জীবনে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে যেখানে নির্যাতনকারী কোনভাবে তার পরিচিত ছিল।[]

নারীর প্রতি সহিংসতাকে কয়েকটি বৃহৎ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এগুলোর মধ্যে "ব্যক্তির" দ্বারা সহিংসতা ও "রাষ্ট্রের" দ্বারা সহিংসতা উভয়ই রয়েছে।। সহিংসতার কোন কোন ধরন আছে যা ব্যক্তির দ্বারা ঘটে যথা - ধর্ষণ, গৃহ নির্যাতন, যৌন হয়রানি, প্রজননগত জোর-জবরদস্তি, কণ্যা শিশুহত্যা, লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাত, প্রসবকালীন সহিংসতা, উচ্ছৃঙ্খলা জনতার দ্বারা সহিংসতা বা দাঙ্গা, রীতি বা আচারগত চর্চা যেমন সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বা অনর কিলিং, যৌতুক সহিংসতা বা পণ মৃত্যু, নারী খৎনা, অপহরণপূর্বক বিবাহ বা জোরপূর্বক বিবাহ। আবার কিছু কিছু ধরনের সহিংসতার কর্তা হচ্ছে রাষ্ট্র, যেমন - যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা, সংঘর্ষের সময় যৌন সহিংসতা এবং যৌন দাসত্ব, বাধ্যতামূলক নির্বীজন, জোরপূর্বক গর্ভপাত, পুলিশ ও কর্তৃত্বকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর দ্বারা সহিংসতা, পাথর ছুড়ে হত্যা বা চাবুক মারা। আবার অনেক ধরনের যৌন সহিংসতা সংঘটিত সংগঠিত অপরাধ চক্রের দ্বারা, যেমন - নারী পাচার এবং জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি[]

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নারীর জন্ম থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সকল পর্যায়ে নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ধরন নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে।[]

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে যেখানে বিভিন্ন সম্মেলন বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন ডিরেক্টিভ এর সাহায্যে আন্তর্জাতিক মাত্রায় এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাচ্ছে, যেমন যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ডিরেক্টিভ, মানব পাচারের বিরুদ্ধে ডিরেক্টিভ।[][] উল্লেখ্য, এখানে ডিরেক্টিভ বলতে কোন আন্তর্জাতিক সংঘের একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি করা লক্ষ্যমাত্রাকে বোঝানো হয় যেখানে সংঘটির সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে সেই লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যে কাজ করতে হয়, কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণের উপায় সেখানে বলে দেয়া থাকে না।

সংজ্ঞা

[সম্পাদনা]

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও গার্হস্থ্য সহিংসতা দূর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক বেশ কিছু আন্তর্জাতিক উপকরণ প্রণীত হয়েছে। এগুলি সাধারণত এই ধরনের সহিংসতা কী তার একটি সংজ্ঞা দিয়ে শুরু হয় এবং এটিকে কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তার প্রস্তাবনা দিয়ে শেষ হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Citations:
  2. "A/RES/48/104 - Declaration on the Elimination of Violence against Women"। United Nations General Assembly। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৪ 
  3. Moradian, Azad (১০ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "Domestic Violence against Single and Married Women in Iranian Society"Tolerancy.orgThe Chicago School of Professional Psychology। ২৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৫ 
  4. Prügl, Elisabeth (Director) (২৫ নভেম্বর ২০১৩)। Violence Against Women. Gender and International Affairs Class 2013. Lecture conducted from The Graduate Institute of International and Development Studies (IHEID)। Geneva, Switzerland। 
  5. WHO (জুলাই ১৯৯৭)। Violence against women: Definition and scope of the problem, 1, 1-3 (পিডিএফ)World Health Organization। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৩ 
  6. "Directive 2002/73/EC - equal treatment of 23 September 2002 amending Council Directive 76/207/EEC on the implementation of the principle of equal treatment for men and women as regards access to employment, vocational training and promotion, and working conditions" (pdf)। সেপ্টেম্বর ২০০২। 
  7. "Directive 2011/36/EU of the European Parliament and of the Council of 5 April 2011 on preventing and combating trafficking in human beings and protecting its victims, and replacing Council Framework Decision 2002/629/JH"Official Journal of the European Union। ২৬ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল (pdf) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৬