ফজলুল হক তালুকদার
ফজলুল হক তালুকদার | |
---|---|
বাকেরগঞ্জ-৯ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ৭ মার্চ ১৯৭৩ – ৬ নভেম্বর ১৯৭৬ | |
পূর্বসূরী | আসন শুরু |
উত্তরসূরী | রাশেদ খান মেনন |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
জন্ম | ২ নভেম্বর ১৯৪২ সাল |
মৃত্যু | ১৬ জানুয়ারি ১৯৯৪ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশ |
পেশা | ফ্লাইট সার্জেন্ট |
আন্দোলন | মুক্তিযুদ্ধ |
সঙ্গী | খাওলা খাতুন |
সন্তান | এক পুত্র এক কন্যা |
পিতা-মাতা |
|
ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক তালুকদার একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ৯ নম্বর সেক্টরে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদায় এডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নামে বিএম কলেজে একটি হল আছে। তিনি তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-৯ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।[১]
জন্ম
[সম্পাদনা]ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক ১৯৪২ সালে বরিশাল কোতয়ালী থানার সায়েস্তাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আলী তালুকদার
পড়াশোনা
[সম্পাদনা]তিনি সায়েস্তাবাদ হাইস্কুল থেকে মেট্রিক, বিএম কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে বিএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ভর্তি হন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান
[সম্পাদনা]তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির সদস্য ছিলেন। তাকে আগরতলা যড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয়।[২] ১৯৬৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁকে এবং সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলি করে। সার্জেন্ট জহুরুল হক মৃত্যুবরণ করেন। ফজলুল হক কয়েক মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হন।
ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা
[সম্পাদনা]বিমান বাহিনীতে চাকুরীরত অবস্থায় ১৯৬৭ সনের ২১শে ডিসেম্বর পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামালার অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হককে গ্রেফতার করে(১১ নং অভিযুক্ত)। ৬ মাস নির্যাতন সেলে নানা প্রক্রিয়ায় অত্যাচার নির্যাতন সহ দীর্ঘ ১৪ মাস পাকিস্তানিগোয়েন্দা বাহিনীর ঢাকা সেনানিবাসস্থ নির্যাতন ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে উনসত্তরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে সার্জেন্ট জহুরুল হক সহ উনাকে হত্যার উদ্দেশ্য গুলি ও উপর্যপুরি বেয়নেট চার্জ করা হয়। প্রায় মৃত অবস্থায় তাঁদের ঢাকা সিএমএইচ এ নেওয়া হয় এবং দীর্ঘক্ষণ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক মৃত্যু বরণ করেন। শ্বাসরুদ্ধর দীর্ঘ ৫ ঘন্টা জটিল অপারেশনের পর সৌভাগ্যক্রমে প্রায় অলৌকিক ভাবে ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক প্রাণে বেঁচে যান। অথচ ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কাছে খবর পৌঁছে যে, সার্জেন্ট জহুরুল হক গুরুতর আহত আর ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক শাহাদাত বরন করেছেন।মিছিলের ভাষা ছিল “ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হকের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”। ঢাকা সেনানিবাসেরএই ঘটনার প্রতিবাদে ১৮ই ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ শামসুজ্জোহাসশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।এ ঘটনায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নতুন মোড় নেয়।গণ আন্দোলনরূপ নেয় গণ অভ্যুত্থানে। গণঅভ্যুত্থানের ফলে ভীত হয় পাকিস্তানি শাসক চক্র ২২শে ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা তুলে নেন এবং অভিযুক্তদের মুক্তি দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের অবদান
[সম্পাদনা]ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক বরিশালে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন করেন এবং ঐতিহাসিক যুনাহারের নেতৃত্ব দেন। অতঃপর পাক বাহিনীর প্রবলআক্রমণের মুখে মুক্তিযুদ্ধ আরও সংগঠিত করার জন্য ভারতে যান এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদায় ৯নং সেক্টর এর এডজুটেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]ছাত্র অবস্থায় তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ পদে চাকরি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি নিন্মলিখিত দায়িত্ব পালন করেছেন:
- জাতীয় সংসদ সদস্য (১৯৭০-১৯৭৩),
- জাতীয় সংসদ সদস্য (১৯৭৩-১৯৭৫),[১]
- প্রাক্তন সদস্য, জাতীয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল(সভাপতি মহামান্য রাষ্ট্রপতি),
- প্রাক্তন সদস্য, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড,
- প্রাক্তন সদস্য, ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কাউন্সিল,
- প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন সমবায় ফেডারেশন,
- প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ প্রাক্তন বিমান বাহিনী সদস্য কল্যাণ সংস্থা,
- প্রাক্তন সহ-সভাপতি, প্রাক্তন সামরিক কর্মচারী কল্যাণ সমবায় সমিতি লি:,
- সদস্য, সমবায় নীতিমালা নির্ধারণ কমিটি,
- প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]১৯৯৫ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র এক কন্যা ও স্ত্রী খাওলা খাতুনকে রেখে যান।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "আগরতলা মামলার ঘটনাপ্রবাহ"।