ফেব্রুয়ারি ২০১০-এ অস্ট্রেলিয়ায় সাইবার আক্রমণ
ফেব্রুয়ারি ২০১০-এ অস্ট্রেলিয়ায় সাইবার আক্রমণ | |||
---|---|---|---|
তারিখ | ফেব্রুয়ারি, ২০১০ | ||
অবস্থান | ইন্টারনেট ও অস্ট্রেলিয়া | ||
পদ্ধতি | স্প্যাম, রাস্তায় বিক্ষোভ, ডিনাইয়াল অব সার্ভিস | ||
পক্ষ | |||
অস্ট্রেলিয়ান সাইবার আক্রমণ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ছিল প্রস্তাবিত ওয়েব সেন্সরশিপ নীতিমালার জন্য অস্ট্রেলিয়ান সরকারের বিরুদ্ধে পরিচয় গোপনকারী অনলাইন সম্প্রদায়ের পরিচালিত DoS আক্রমণ সিরিজ। আক্রমণকারীরা এই সাইবার আক্রমণকে 'অপারেশন টিটস্টোর্ম' নাম দেয়। তারা ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি ১০ ও ১১ তারিখে সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশে বিঘ্ন ঘটায়। সরকারি ইমেইল, ফ্যাক্স এবং ফোনকলেও প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। আক্রমণের আকার ও আক্রমণকারীর সংখ্যা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় যে, আক্রমণের সংখ্যা কয়েকশত থেকে কয়েকহাজার।
অস্ট্রেলিয়ান টেলিযোগাযোগমন্ত্রী স্টিফেন কনরয় মূলত পর্নগ্রাফিক কন্টেন্টযুক্ত সাইট ফিল্টার করার জন্য নীতিমালা প্রস্তাব করেন। অপরিশোধিত ইন্টারনেট এক্সেস দেয় এমন অনেক গ্রুপ এবং গুগল, ইয়াহুর মত কোম্পানি এ নীতিমালার বিরোধিতা করে। কনরয়ের একজন মুখপাত্র বলেন যে, এই প্রতিবাদ আইনসম্মত নয় এবং একে দায়িত্বহীন বলেন। অন্যান্য বিরোধিতাকারী গ্রুপও এর সমালোচনা করে। পরবর্তীতে ২০ ফেব্রুয়ারিতে প্রজেক্ট ফ্রীওয়েব নামে আরও একটি আক্রমণ হয়।
পটভূমি
[সম্পাদনা]অস্ট্রেলিয়ান টেলিযোগাযোগমন্ত্রী স্টিফেন কনরয় প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারীদের আইনসংগত নয় এবং সরকারের মতে অবাঞ্ছিত কন্টেন্ট-এ অস্ট্রেলিয়ান ব্যবহারকারীদের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। ধর্ষণ, পাশবিকতা, শিশুযৌনতাসহ আরও বেশকিছু ধরনের কন্টেন্টযুক্ত ওয়েবসাইট ব্লক করতে হবে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় আরও অন্তর্ভুক্ত আছে জুয়াসহ অন্যান্য আসক্তির উৎস। প্রস্তাবনার এক ফাঁস হওয়া অংশে দেখা যায় কালোতালিকাভুক্ত অনেক সাইট যেগুলোতে প্রাপ্তবয়স্কদের কন্টেন্ট নেই। 'অপারেশন টিটস্টোর্ম' নামটিও দেয়া হয় এইরকম তালিকাভুক্ত কন্টেন্ট অনুসারে।
নিষিদ্ধ তালিকা অনেক বড় হতে পারে বলে গুগল প্রশ্ন তুলেছে। ফ্রি স্পিচ গ্রুপও তীব্র বিরোধিতা করে। 'হাংরি বিস্ট' টেলিভিশনের জন্য ম্যাকনাইর ইঙ্গুনিটি রিসার্চ পরিচালিত ভোটে দেখা যায়, ১০০০ জনের মধ্যে ৮০% পরিকল্পনার পক্ষে মত দেন। জরিপে আরও দেখা যায় কালোতালিকা গোপন রাখার ব্যাপারে সরকারের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে ৯১% অবহিত। [১]
প্রতিরক্ষা বিভাগের সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্র আবিষ্কার করে যে, ৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই আক্রমণ আসছিল। আক্রমণের ২দিন আগে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "সরকারের কাছে অবাঞ্ছিত মনে হওয়া তথ্যে নাগরিকদের প্রবেশ বন্ধ করার অধিকার কোন সরকারের থাকা উচিত না।" 'চার্চ অব সায়েন্টোলজি' ( প্রজেক্ট ক্যানোলজি ) এবং ইরান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অজ্ঞাত পরিচয়ধারীরা মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুডের ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে যায়।[২]
আক্রমণ
[সম্পাদনা]আক্রমণ শুরু হয় AEST অনুসারে ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮ টায়। সেদিন সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে DoS আক্রমণ চালানো হয়। যোগাযোগ বিভাগ বলে যে, হ্যাকারেরা সরকারি নিরাপত্তা ভেদ করতে পারে নি, তবে সরকারি কম্পিউটার সার্ভারগুলোকে ব্যস্ত করে দেয়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সাইটগুলোকে অপ্রাপ্য করে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের ওয়েবসাইট ২দিন বন্ধ ছিল অতিরিক্ত রিকুয়েস্টের কারণে। রুডের সরকারের সাইটগুলো কিছু সময়ের জন্য ঢোকা যাচ্ছিল না। প্রধান লক্ষ্য হিসেবে যোগাযোগ বিভাগ অনেক বেশি পরিমাণে ওয়েব রিকুয়েস্ট পেতে থাকে। সরকারি অফিসগুলো স্প্যাম ইমেইল, অপ্রয়োজনীয় ফ্যাক্স এবং ভুয়া ফোনকলে প্লাবিত হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবপেইজে পর্নোগ্রাফিক ছবি দিয়ে দেয়া হয়।[৩][৪]
প্রকৃত আক্রমণের আকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট পাওয়া যায়। একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এই আক্রমণকে তুলনা করেন শপিং সেন্টারের রাস্তায় আড়াআড়িভাবে ট্রাক পার্ক করার সাথে।একটি নিরাপত্তা প্রযুক্তি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বলে, আক্রমণ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১৬.৮৪ মেগাবিট। সেকেন্ডে সাড়ে সাত মিলিয়ন রিকুয়েস্ট শুরুতে পার্লামেন্ট ওয়েবসাইটকে ডাউন করে দেয়, যাকে একজন লেখক ভয়ানক হিসেবে বর্ণনা করেন; যেখানে সাধারণ সাইটটি সেকেন্ডে কয়েকশ রিকুয়েস্টে পেয়ে থাকে। [৫][৬]
প্রতিক্রিয়া
[সম্পাদনা]কনরয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, এইধরনের আক্রমণ আইনসম্মত রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়। তার মতে, আক্রমণকারীরা "পুরোপুরি দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অস্ট্রেলিয়ার জনগণের সেবায় বাধা"। সিস্টেম প্রশাসক বলেন, " এই DDos আক্রমণ প্রস্তাবিত আইনের প্রতিবাদ হিসেবে ভুল"। এন্টি-সেন্সরশিপ গ্রুপও সমালোচনা করে এই আক্রমণের। অজ্ঞাতপরিচয়ধারীরা দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ ফেব্রুয়ারি ছোট আকারে প্রতিবাদ করে ক্যানবেরার পার্লামেন্ট হাউজের বাইরে ও বড় শহরগুলোতে। এর সাথে অন্যান্য কিছু দেশের এমবাসিতেও প্রদর্শনী চলে। [৭]
এই আক্রমণের কিছু সমর্থক পরবর্তীকালে বলেন, সরকারকে এই পলিসি থেকে ফেরাতে ওয়েবসাইট ডাউন করাই যথেষ্ট নয়; অন্যরা এর সাথে সম্মতি পোষণ করে না এবং জনপ্রিয় সরকারি ওয়েবসাইটে আবার আক্রমণের প্রস্তাব দেয়। [৮]
নিউ সাউথ ওয়েলসের আইন জার্নালে এই আক্রমণকে অস্ট্রেলিয়ার সন্ত্রাসী আইনের দিক থেকেও সমালোচনা করা হয়।[৯] একজন লেখক লিখেছেন, অনলাইনে প্রতিবাদের জন্য ক্ষয়ক্ষতি করার ব্যাপারে কোনো নীতিমালা বা এরজন্য শাস্তিরবিধান নিয়ে কোনো নীতিমালা নাই। [১০]
একজন অস্ট্রেলিয়ান তরুণকে ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগকে দুর্বল করে দিতে অন্য হ্যাকারদের উদ্দীপ্ত করার চারটি অভিযোগে অভিযুক্ত এবং বিধিনিষিদ্ধ তথ্যে অনধিকার প্রবেশে তার ভূমিকার জন্যও দুইটি অভিযোগে অভিযূক্ত করা হয়। দোষ স্বীকার করে নেয়া ও ভাল ব্যবহারের জন্য তাকে কয়েদ করার পরিবর্তে একটি বন্ড পরিশোধ করতে বলা হয়। [১১]
২০১০এর জুলাইতে কনরয় কীভাবে কন্টেন্ট শ্রেণিবিভাগ করেন-তার পর্যালোচনার জন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ১২ মাসের জন্য মূলতবী করা হয়। এই প্রস্তাবনা দ্য কোয়ালিশন এবং গ্রিনস- এর বিরোধীতায় আর এগুতে পারে নি। ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেলস্ট্রা এবং অপ্টাস নিজেদের উদ্যোগে কিছু কন্টেন্ট ব্লক করার ব্যাপারে একমত হয়। [১২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Why Conroy loves porn"। The Sydney Morning Herald। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ "Hackers protesting against a proposed internet filter that targets pornography shut down Federal Government website"। Herald Sun। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ Ragan, Steve (১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "Anonymous issues ultimatum to Australian government"। The Tech Herald.com। ১৭ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১১।
- ↑ Moses, Asher (২০১০-০২-১০)। "Operation Titstorm hackers strike Australia"। The Sydney Morning Herald। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Australia cyber attacks could last 'months': hackers"। Agence France-Presse। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ Kleinman, Zoe (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "Cyber attacks against Australia 'will continue'"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ LeMay, Renai (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "Anonymous says Titstorm beats a petition"। Ziff Davis। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ LeMay, Renai (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "Anonymous' Titstorm moves to offline protest"। Ziff Davis। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ Hardy, Keiran। "Operation Titstorm: hacktivism or cyber-terrorism?"। The University of New South Wales Law Journal। Australia। 33 (2): 474–502। আইএসএসএন 0313-0096।
- ↑ Vaile, David। "Forward"। The University of New South Wales Law Journal। Australia। 33 (2): 428। আইএসএসএন 0313-0096।
Keiran Hardy assesses Operation Titstorm’ – an online protest against Australia's proposed internet filter – as an act of terrorism, arguing that the embarrassing (for the federal police) but essentially harmless offensive, is caught by Commonwealth terrorism provisions, so widely drafted are these offences borne in the often scrutiny-free territory of the 'war on terror'.11 This is problematic, he argues, because it leaves no place for legitimate acts of online protest, or at least sets the penalty far too high for relatively minor cybervandalism.
- ↑ Ross, Norrie (৭ ডিসেম্বর ২০১০)। "Steve Slayo avoids jail term after inciting hack attack on Federal Government"। Herald Sun। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১১।
- ↑ Foo, Fran (৭ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "ISP filter could be buried"। The Australian। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১১।
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Ethan Zuckerman; Hal Roberts; Ryan McGrady; Jillian York; John Palfrey (ডিসেম্বর ২০১০)। "Distributed Denial of Service Attacks Against Independent Media and Human Rights Sites" (পিডিএফ)। The Berkman Center for Internet & Society at Harvard University। ২০১১-০৩-০২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৩।