ভাজুরত্ন কংসকার
ভাজুরত্ন কংসকার | |
---|---|
भाजुरत्न कंसकार | |
জন্ম | ১৮৮২ |
মৃত্যু | ২০ ডিসেম্বর ১৯৫৬ কাঠমান্ডু | (বয়স ৭৩–৭৪)
জাতীয়তা | নেপালি |
পেশা | বণিক, জনহিতৈষী |
দাম্পত্য সঙ্গী | জ্ঞান মায়া তাম্রকার (বি. ১৯০৩; মৃ. ১৯১৮) |
সন্তান | অন্তত ৪ জন |
ভাজুরত্ন কংসকার (দেবনাগরী: भाजुरत्न कंसकार) (১৮৮২ – ২০ ডিসেম্বর ১৯৫৬) হলেন একজন নেপালি বণিক এবং জনহিতৈষী। তিনি নেপালের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান জ্যোতি গ্রুপের প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত করেন। এছাড়াও তিনি দেশটিতে থেরোবাদী বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যখন ধর্মটি রাষ্ট্র কর্তৃক অবদমিত করা হচ্ছিল।[১][২]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]ভাজুরত্ন কাঠমান্ডুতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পিতা কুলবীর সিংহ এবং মা নানিবেটি কংসকারের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। তার পৈতৃক নিবাস কেল টোল এলাকায় ছিল, যা মধ্য কাঠমান্ডুর একটি বাণিজ্যিক ও উপানুষ্ঠানিক কেন্দ্র ছিল। এই এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো জন বহা দ্যঃ, যা সংস্কৃত ভাষায় আর্যাবলোকিতেশ্বর (মহান অবলোকিতেশ্বর) নামে পরিচিত। ভাজুরত্ন কখনো বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন নি, বরং স্বশিক্ষায় লিখতে ও পড়তে শিখেন।
কংসকারদের বংশানুক্রমিক পেশা হলো ব্রোঞ্জ, কাঁসা ও তামা দিয়ে গৃহস্থালির তৈজসপত্র তৈরি করা। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতের দার্জিলিংয়ে এক আত্মীয়ের কারখানায় কাজ করা শুরু করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে কাঠমান্ডুতে প্রত্যাবর্তন করে জ্ঞান মায়া তাম্রকারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এর কিছু দিন পরেই তিনি দার্জিলিংয়ে ফিরে আসেন।[৩]
বাণিজ্য যাত্রা
[সম্পাদনা]দার্জিলিংয়ে বেশ কয়েক বছর কাজ করার পর ভাজুরত্ন হাতের সঞ্চয় দিয়ে কাঠমান্ডুতে একটি বস্ত্রের দোকান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ব্যবসার পুঁজি সংগ্রহের জন্য মুম্বাই যান। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি কেল টোল এলাকায় একটি বস্ত্রালয় খোলেন। তিনি ব্যবসায় উন্নতি করতে থাকেন। কিন্তু ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের একটি ভয়াবহ আগুনে তার কাপড় ও সুতার সমস্ত পুঁজি নষ্ট হয়ে যায় এবং ভাজুরত্ন বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। একই সময়ে চারজন সন্তান রেখে তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন।
ভাজুরত্ন পুনর্বার বিবাহ করেন এবং ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতে নতুন করে ব্যবসা শুরু উদ্দেশ্যে গৃহস্থালির তৈজসপত্র আনতে ভারতের কালিম্পংয়ে যান। সে সময় কালিম্পং তিব্বতের লাসায় বাণিজ্য যাত্রার একটি প্রারম্ভিক বিন্দু ছিল। তার ব্যবসা বৃদ্ধি পেলে তিনি কাঠমান্ডু থেকে কর্মী এনে নিজের কারখানা স্থাপন করেন।[৪]
ভাজুরত্ন অভ্যাসবশত সর্বদা একটি সাদা টুপি পরিধান করতেন, যার কারণে তিব্বতের ব্যবসায়ীদের নিকটি তিনি সিয়ামুকাপু নামে পরিচিত হয়ে যান, প্রমিত তিব্বতি ভাষায় যার অর্থ "সাদা টুপি"। এই নামটিই পরবর্তীতে কালিম্পং ও তিব্বতে তার প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের নামে রূপান্তরিত হয়।[৫][৬]
উদ্যোক্তা হিসেবে তিব্বত ও ভারতে
[সম্পাদনা]ভাজুরত্ন তিব্বতের রাজধানী কেন্দ্রিক অগ্রসরমান লাসা নেওয়ারদের কার্গো বাণিজ্যের মাঝে বৈচিত্র্য আনেন। পরবর্তীতে তিনি তাদের মধ্যে কমিশন ভিত্তিতে বাণিজ্য সামগ্রী প্রদান করতেন এবং খচ্চর চালিত ক্যারাভানে পণ্য আমদানি রপ্তানি শুরু করেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তিনি লাসার বাণিজ্য পথে ফারি নামক স্থানে নিজস্ব বাণিজ্য কুঠি স্থাপনে সক্ষম হন।
যেহেতু লাসায় আনা প্রায় সমস্ত বাণিজ্য পণ্যই কলকাতার বন্দর থেকে আনা হতো, তাই ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে সেখানেও একটি কার্যালয় চালু করেন। তিনি তার পুত্র মনিহর্ষ জ্যোতি কংসকারকে সেই কার্যালয়ে দায়িত্ব দেন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লাসায় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন।[৭]
ভাজুরত্নের বিকাশমান উদ্যোগ পরিবর্তীতে ১৯৪০ এর দশকে তার পুত্র মনিহর্ষ জ্যোতি (১৯১৭ - ১৯৯২) কর্তৃক জ্যোতি গ্রুপ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য, উৎপাদন, ভ্রমণ, স্টিল, ওষুধ এবং বিমা খাতে যুক্ত ছিল।[৮][৯] ভাজুরত্নের নাতি রূপ জ্যোতি, জ্যোতি গ্রুপের বর্তমান সভাপতি।
ধর্মীয় দান
[সম্পাদনা]ভাজুরত্ন সে সময় তৎকালীন শাসকদের বিরুদ্ধে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও নেপালে থেরোবাদী বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমর্থকে পরিণত হন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে রাণা শাসক কর্তৃক নেপাল থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নির্বাসিত করা হলে, ভাজুরত্ন তাদের কালিম্পংয়ে তাদের সেবার ব্যবস্থা করেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয় দফার বহিষ্করণের সময় কয়েক বছর তিনি ভিক্ষুদের আবাসন ও খাদ্যের ব্যবস্থা করেন।[১০][১১] ভাজুরত্নের এই উদারতার জন্য তাকে "দান নায়ক" হিসেবেও অভিহিত করা হয়।[১][১২] বৌদ্ধ ধর্মশিক্ষায় একজন গুরুত্বপূর্ণ দাতা চরিত্র হিসেবে তার জীবনীও পাঠ করা হয়।[১৩]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]ভাজুরত্ন ৭৪ বছর বয়সে কাঠমান্ডুতে নিজ গৃহে মৃত্যুবরণ করেন।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ LeVine, Sarah; Gellner, David N. (২০০৫)। Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal। Harvard University Press। পৃষ্ঠা 103। আইএসবিএন 978-0-674-01908-9।
- ↑ "Trading"। Jyoti Group। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৩।
- ↑ Hilker, DS Kansakar (২০০৫)। Syamukapu: The Lhasa Newars of Kalimpong and Kathmandu। Kathmandu: Vajra Publications। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 99946-644-6-8।
- ↑ Hilker, DS Kansakar (২০০৫)। Syamukapu: The Lhasa Newars of Kalimpong and Kathmandu। Kathmandu: Vajra Publications। পৃষ্ঠা 27। আইএসবিএন 99946-644-6-8।
- ↑ Turin, Mark (২০ অক্টোবর ২০০৬)। "Timeless trader"। Nepali Times। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৩।
- ↑ Harris, Tina (২০১৩)। Geographical Diversions: Tibetan Trade, Global Transactions। University of Georgia Press। পৃষ্ঠা 45। আইএসবিএন 9780820345123।
- ↑ Kansakar, Manikratna (২০০১)। "Syamukapu - A recollection"। Lall, Kesar। The Newar merchants in Lhasa। Kathmandu: Ratna Pustak Bhandar। পৃষ্ঠা 111। আইএসবিএন 99933-0-187-6।
- ↑ "Jyoti Group"। Jyoti Group। ১৬ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৩।
- ↑ "Nepal's first steel factory celebrates golden jubilee"। The Kathmandu Post। ৯ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Dietrich, Angela (১৯৯৬)। "Buddhist Monks and Rana Rulers: A History of Persecution"। Buddhist Himalaya: A Journal of Nagarjuna Institute of Exact Methods। ১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৩।
- ↑ Vandya, R. B. (১৯৭৮)। Sanghanayaka Ven. Pragnananda Mahasthabir: A Concise Biography। Chandra Devi Shakya, Ratna Devi Shakya। পৃষ্ঠা 35। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৩।
- ↑ Tewari, Ramesh Chandra (১৯৮৩)। "Socio-Cultural Aspects of Theravada Buddhism in Nepal"। The Journal of the International Association of Buddhist Studies Vol 6 No 2। পৃষ্ঠা 92। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৩।
- ↑ "ATBU Syllabus 2013, Courses of Study, Master of Arts in Theravada Buddhism, Theravada Buddhist Academy" (পিডিএফ)। Association of Theravāda Buddhist Universities। পৃষ্ঠা 35। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৩।