পুঠিয়া উপজেলা
পুঠিয়া | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে পুঠিয়া উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°২২′৩০″ উত্তর ৮৮°৫১′০″ পূর্ব / ২৪.৩৭৫০০° উত্তর ৮৮.৮৫০০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | রাজশাহী জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ১৯২.৬৪ বর্গকিমি (৭৪.৩৮ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ২,০৭,৪৯০ |
• জনঘনত্ব | ১,১০০/বর্গকিমি (২,৮০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৬.৩৩% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৮১ ৮২ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
পুঠিয়া বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা ।
অবস্থান ও আয়তন
[সম্পাদনা]রাজশাহী শহর থেকে পুঠিয়ার দুরত্ব মাত্র ৩২ কিলোমিটার এবং নাটোর থেকে ১৮ কিলোমিটার । প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অংশ পুঠিয়ার জনবসতি হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। হাজার বছরের ইতিহাসের গতিধারা নির্ণয়কারী অসংখ্য নিদর্শন সমৃদ্ধ পুঠিয়া উপজেলার বর্তমান আয়তন ১৯২.৬৪ বর্গকিমি (৭৪.৩৮ বর্গমাইল)। প্রাচীন জমিদার বাড়ীর জন্য পুঠিয়া বিখ্যাত।এখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ঐতিহাসিক মন্দির রয়েছে। রাজশাহীর বিখ্যাত জনহিতৈষী পুঠিয়া রাজ পরিবারের হিন্দু জমিদার রাজাদের দ্বারা মন্দিরগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পুঠিয়ার জমিদার/রাজাগণ প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য এবং ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্নের জন্য বিভিন্ন স্থাপত্য কাঠামো ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মন্দির নির্মাণ করেন, যা আজও কালের সাক্ষী হিসাবে টিকে আছে। পুঠিয়ায় অবস্থিত অধিকাংশ মন্দিরে পোড়ামাটির ফলক স্থাপিত আছে। এখানকার পুরাকীর্তির মধ্যে পাঁচআনি রাজবাড়ী বা পুঠিয়া রাজবাড়ী, চারআনি রাজবাড়ী ও ১৩টি মন্দির রয়েছে। পুঠিয়ার প্রত্ননিদর্শনের মধ্যে ১৪টি স্থাপনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণা করেছে। এই উপজেলার উত্তরে দুর্গাপুর উপজেলা ও বাগমারা উপজেলা, দক্ষিণে চারঘাট উপজেলা ও বাঘা উপজেলা, পূর্বে নাটোর সদর উপজেলা, পশ্চিমে দুর্গাপুর উপজেলা ও পবা উপজেলা। তাহেরপর থেকে পুঠিয়া ১৪কিলোমিটার
প্রশাসনিক এলাকা
[সম্পাদনা]উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থানঃ
উত্তরে - বাগমারা উপজেলা দক্ষিণে- চারঘাট ও বাঘা উপজেলা পূর্বে - নাটোর জেলা পশ্চিমে - দুর্গাপুর উপজেলা ও মতিহার থানা
ইউনিয়ন পরিষদসমূহ:
- পুঠিয়া ইউনিয়ন
- বেলপুকুরিয়া ইউনিয়ন
- বানেশ্বর ইউনিয়ন
- ভালুকগাছী ইউনিয়ন
- শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন
- জিউপাড়া ইউনিয়ন
নামকরণ
[সম্পাদনা]পুঠিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সম্রাট আকবরের আমলে। বৎসরাচার্য নামে এক ঋষিপুরুষ বাদশাহী সূত্রে লাভ করেন পুঠিয়া রাজ্যের জমিদারি। যিনি পুঠিয়া রাজবংশের আদি রাজা নামে পরিচিত। তারও পূর্বে বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত এ উপজেলা পুঠিমাড়ীর বিল নামে পরিচিত ছিল মর্মে জানা যায়। এ থেকে এ উপজেলার নাম পুঠিয়া হয়েছে। আবার স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে আলাপে জানা যায় যে, পুঠিয়া রাজাদের এক আশ্রিতা ছিল তার নাম ছিল পুঠিবিবি। তিনি রুপে গুণে বুদ্ধিমতি এবং অতিশয় ধার্মিক ছিলেন। যাহা বলতেন তাহাই ঠিক ঠিক ফলে যেত। নীলকুঠিদের সাথে যুদ্ধে যাওয়ার আগে বলেছিলেন জয় হবে সত্যিই জয় হয়েছিল। তখন পুঠিয়া রাজবংশের রাজাগণ বললেন তুমি কি চাও, যাহা চাইবে তাহাই পাইবে। তখন পুঠিবিবি বলেছিল আমাকে এমন কিছু দেওয়া হোক যা এলাকার মানুষ যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে। তখন পুঠিয়া রাজবংশের রাজাগণ একমত হয়ে তার ইচ্ছা পূরণার্থে তারই নামানুসারে এই এলাকার নাম রাখেন পুঠিয়া। যা পরবর্তীতে পুঠিয়া উপজেলা হিসাবে নামকরণ হয়।[২]
অন্য এক জনশ্রুতিতে আছে যে বর্তমান পুঁঠিয়া রাজ বাড়ি সংলগ্ন এবং পাঁচ আনি খেলার মাঠের পশ্চিমে স্যাম সাগর। এই স্যাম সাগর পুঠিয়া রাজ বাড়ি প্রতিষ্ঠার পূর্বে একটি বিল ছিল। বিলটির নাম ছিল পুঠি মারীর বিল। বিশাল জলাশয়। রাজা পীতম্বর এর সময় পুঁঠিয়া রাজ বাড়ীর সৌর্ন্দয্য বৃদ্ধির জন্য এই জলাশয় কে পুকুরে রুপান্তর করা হয়। যে পুকুর এখন স্যাম সাগর নামে পরিচিত। অনেকের ধারণা এই স্যাম সাগরের পূর্বের নাম পুঠি মারীর বিল থেকেই বর্তমান পুঠিয়া নামের নামকরণ । একটি বিষয় পরিষ্কার যে পুঁঠিয়া নামকরণের কোন ইতিহাস রাজশাহীর প্রাচীন পাবলিক লাইব্রেরি গুলিতে ও পাওয়া যায় নি। রাজশাহী নামকরণ রাজশাহী প্রাচীন ইতিহাসে থাকলেও পুঠিয়া নামকরণের ইতিহাস পুঠিয়ার রাজ বংশের ইতিহাসে নাই। এখন সম্মানিত পাঠক মণ্ডলীই বেছে নিবেন উপরে বর্নিত কোন জনশ্রুতিটি পুঠিয়া নামকরণের জন্য গ্রহণ যোগ্য জনশ্রুতি। পুঠিয়া নাম পূর্ব থেকে জারী না থাকলে পুঠিয়া রাজ বংশের নাম পুঠিয়া রাজ বংশ না হয়ে অন্য নাম হতে পারতো। পুঠিয়া নাম পূর্ব থেকে জারী না থাকলে চর্তুদ্দশ খ্রিষ্টাব্দের শেষ অথবা পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমেই পুঠিয়া নামে রাজধানী গঠন হত না। [৩]
জনসংখ্যার উপাত্ত
[সম্পাদনা]মোট জনসংখ্যা: ২,০৭,৪৯০ জন
পরিবারের সংখ্যা: ৫২,৯২২ টি
নৃতাত্ত্বিক পরিবার: ৪২০ টি
নৃতাত্ত্বিক মোট লোক সংখ্যা: ১৯৮০ জন
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার: ০.৯৩
মোট ভোটার: ১,৪৫,১৯০ জন
পুরুষ ভোটার: ৭২,৯৯৮ জন
মহিলা ভোটার: ৭২,১৯৮ জন
পরিবারের মোট গড় জনসংখ্যা: ৪.০০
জনসংখ্যার ঘনত্ব: ১০৭৭ জন (প্রতি বর্গ কি. মি.)
ভাষা ও সাংস্কৃতি
[সম্পাদনা]এই উপজেলায় অধিকাংশ মানুষ মুসলিম তাছাড়া এখানে হিন্দু সম্প্রদায়, আদীবাসি সম্প্রদয়, খ্রিষ্টান সম্প্রদয় সহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করে। এখানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের উৎসব হয়। এতে করে উপজেলার সবাই খুশি।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]- প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৯০ টি
- বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়: ৩৯ টি
- নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ৬ টি
- বেসরকারি মাদরাসা: ১৪ টি
- বেসরকারি এবতেদায়ী মাদরাসা: ৩ টি
- বেসরকারি কমার্শিয়াল কলেজ: ১ টি
- বেসরকারি কলেজ: ১২টি
- বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ: ০৩টি
- কারিগরি কলেজ: ০২টি
- টেকনিক্যাল বি এম কলেজ: ১টি
- ভোকেশনাল উচ্চ বিদ্যালয়: ১টি
- শিক্ষার হার: ৫৮.৯০%
- সাক্ষরতার হার: ৫৬.৩৩%
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
[সম্পাদনা]- পুঠিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- জামিরা উচ্চ বিদ্যালয়
- পচামাড়িয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
- পচামাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ
কৃষি বিষয়ক তথ্য
[সম্পাদনা]কৃষি জমির পরিমাণ: ৩৮১০৪ একর
কৃষি পরিবার: ৩৫,৯৮৮ টি
স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য
[সম্পাদনা]রাজশাহী জেলাধীন পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টি রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। এটি ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। এখানে শিশু রোগীদের জন্য আছে ‘‘আইএমসিআই’’ কর্নার। পানি বাহিত বিভিন্ন রোগের জন্য আছে ও আরটি ‘‘কর্নার’’। রোগীদের সার্বক্ষন চিকিৎসার জন্য এখানে জরুরী বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। হাসপাতালে আগত রোগীদের অধিক উন্নত চিকিসার প্রয়োজন হলে তাদের জেলা হাসপাতাল অথবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রাজশাহী প্রেরণের জন্য সরকারি এ্যাম্বুলেন্স ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে । হাসপাতালের অধিনে ২৮ টি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালিত হয়।
হাসপাতাল/স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তালিকা
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- গোপালপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র
- ভালুকগাছী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র
- দাসমাড়িয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র
- পচামাড়িয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র
- পুঠিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র
- বেলপুকুরিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র
হাসপাতালের সংখ্যা (বেসরকারি): ০৪ টি
স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্র: ০৫ টি
যোগাযোগ ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]রেলপথ: ৮ কি. মি.
পাকা রাস্তা: ২১৪ কি. মি.
কাঁচা রাস্তা: ৫৩৩ কি. মি.
ব্রীজ/কালভার্ট: ৫১৩ টি
ব্যাংক ও এন. জি. ও. সমূহের তথ্য
[সম্পাদনা]সরকারী ব্যাংক : ০৪ টি
কর্মসংস্থান ব্যাংক : ১টি
বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা : ৯ টি
এন. জি. ও. সংখ্যা : ২০ টি
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ
[সম্পাদনা]মসজিদ : ৪১২ টি
মন্দির : ৮৭ টি
গীর্জা : ০৩ টি
রাজস্ব বিষয়ক
[সম্পাদনা]ইউনিয়ন ভূমি অফিস : ০৪টি
উন্মুক্ত খাস জলমহাল : ০৭ টি(আয়তন ২১ হেঃ)
সরকারী পুকুর : ২০০ টি(আয়তন ৫৫ হেঃ)
গুচ্ছগ্রাম : ০১ টি
আশ্রয়ন প্রকল্প : ০১টি
পরিবার(গুচ্ছ গ্রাম) : ৩০ টি
হাট : ১৫ টি
ভেষ্টেট পুকুরের সংখ্যা : ৪০ টি
অন্যান্য তথ্যাবলী
[সম্পাদনা]রেজিস্ট্রার্ড কèাব : ৫৭ টা
মৎস্য আড়ত : ০৬টি
বরফকল : ০৮টি
ভি,জি,ডি কার্ডধারী : ১৬২৯ জন
খাদ্য গুদামের সংখ্যা : ০৬ টি
খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা : ৪০০০ মেঃ টঃ
রিসোর্স সেন্টার সংখ্যা : ০১ টি
সরকারী হ্যাচারীর সংখ্যা : ০১ টি
বেসরকারী হ্যাচারীর সংখ্যা : ০৪টি
ঐতিহাসিক ও প্রত্ততাত্তিক নিদর্শন
[সম্পাদনা](ক) পুঠিয়া রাজবাড়ী (খ) গোবিন্দ মন্দির
(গ) ছোট আহ্নিক মন্দির (ঘ) ছোট শিব মন্দির
(ঙ) দোল মন্দির (চ) বড় শিব মন্দির
(ছ) জগন্নাথ রথ মন্দির (জ) চারআনি জমিদারবাড়ী
(ঝ) বড় আহ্নিক মন্দির (ঞ) ছোট গোবিন্দ মন্দির
(ট) গোপাল মন্দির (ঠ) হাওয়াখানা (ড) কৃষ্ণপুর মন্দির
(ঢ) খিতিশ চন্দ্রের মঠ (ণ) কেষ্ট খেপার মঠ
পুঠিয়ার ঐতিহ্য: রাজবাড়ী ও মন্দির সমূহ পুঠিয়া রাজবংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: পুঠিয়া রাজবংশ মুঘল সম্রাট আকবর এর সময় (১৫৫৬-১৬০৫) প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় পুঠিয়া লস্করপুর পরগনার অর্ন্তগত ছিল। ১৫৭৬ সালে মুঘল সম্রাট আকবর এর সুবেদার মানসিংহ বাংলা দখল করার সময় পুঠিয়া এলাকার আফগান জায়গীরদার লস্কর খানের সাথে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে পুঠিয়া রাজবংশের প্রথম পুরুষ বৎসাচার্য যিনি পুঠিয়ায় একটি আশ্রম পরিচালনা করতেন, তিনি মানসিংহকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করায় লস্কর খান পরাজিত হন। এ জন্য মানসিংহ বৎসাচার্যকে পুঠিয়া এলাকার জমিদারী দান করেন। বৎসাচার্য জমিদারী নিজ নামে না নিয়ে তার পুত্র পীতম্বর এর নামে বন্দোবস্ত নেন। পীতম্বর জমিদারীর আয়তন বৃদ্ধি করেন। পীতম্বর নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যু বরণকরলে তার সহোদর নীলাম্বর জমিদারী প্রাপ্ত হন। সম্রাট জাহাঙ্গীর তাকে রাজা উপাধি দান করেন। নীলাম্বর এর মুত্যুর পর পুত্র আনন্দরাম সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। আনন্দরাম এর একমাত্র পুত্র রতিকান্তের জ্যেষ্ঠ পুত্র রামচন্দ্র সকল সম্পত্তির মালিক হন। রামচন্দ্রের দ্বিতীয় পুত্র নরনারায়নের পর তার একমাত্র পুত্র প্রেমনারায়ন রাজ্যাধিকার পান। প্রেমনারায়ন এর পুত্র অনুপনারায়ণ এর সময় পুঠিয়া জমিদারীটি বার্ষিক ১,২৫,৫১৬ টাকা খাজনায় মুর্শিদকুলী খানের সাথে বন্দোবস্ত হয়। অনুপনারায়ণের চারপুত্র (নরেন্দ্র, মেদ নারায়ন, রুপ নারায়ণ ও প্রাণ নারায়ণ) এর মধ্যে ১৭৪৪ সালে রাজ স্টেট বিভক্ত হয়। বড় ভাই নরেন্দ্র নারায়ণের অংশে পাঁচ আনা এবং ছোট তিন ভাই এর অংশে সাড়ে তিন আনা নির্ধারিত হয়। বড় ভাই নরেন্দ্র নারায়ণের অংশ পাঁচ আনি এস্টেট এবং রুপ নারায়ণের অংশ চার আনি এস্টেট নামে পরিচিত। নরেন্দ্র নারয়নের জ্যেষ্ঠ পুত্র ভুবেন্দ্রনাথ ১৮০৯ সালে রাজা বাহাদুর উপাধি লাভ করেন। ভুবেন্দ্রনারায়ণের একমাত্র পুত্র জগন্নারায়ণ রায়ের দ্বিতীয় স্ত্রী ভুবনময়ী হরেন্দ্রনারায়ণকে দত্তক নেন। রাজা হরেন্দ্রনারায়নের পুত্র যোগেন্দ্রনারায়ণ মৃত্যুর পূর্বে সকল সম্পত্তি স্ত্রী শরৎসুন্দরীর নামে দিয়ে যান। শরৎসুন্দরী ১৮৬৬ সালে রাজশাহীর গুনাইপাড়ার কেশবকান্ত চক্রবতীর পুত্র রজনীকান্তকে দত্তক নিয়ে নাম দেন যতীন্দ্রনারায়ণ। শরৎসুন্দরী শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে প্রচুর দান করতেন। তার অজস্র দান ও নিঃস্বার্থ জনসেবায় মুগ্ধ হয়ে ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে “রানী” উপাধিতে এবং পরবর্তিতে ১৮৭৭ সালে “মহারানী” উপাধিতে ভূষিত করেন। কুমার যতীন্দ্রনারায়ণ ১৮৮০ সালে ঢাকা জেলার ভূবনমোহন রায়ের কন্যা হোমন্তকুমারী দেবীকে বিয়ে করেন। হোমন্তকুমারী দেবী ১৫ বছর বয়সে ৬ মাসের সন্তান গর্ভে নিয়ে বিধবা হন। তিনি পুঠিয়ার বিরাট রাজ প্রাসাদটি নির্মাণকরে শাশুড়ী মহারানী শরৎসুন্দরী দেবীর শ্রদ্ধায় উৎসর্গ করেন। হেমন্তকুমারী দেবী বহুসংখ্যক সৎকাজের জন্য লর্ড কার্জন কর্তৃক ১৯০১ সালে “রানী” এবং ১৯২০ সালে লর্ড আরউইনের আমলে “মহারানী” উপাধিতে ভূষিত হন। তার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে সারাদেশে জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে গণজাগরণ ঘটলে ক্রমান্বয়ে পুঠিয়া রাজবংশেরও বিলোপ ঘটে।
পুঠিয়ার পুরাকীর্তি: পুঠিয়ার জমিদার/রাজাগণ প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য এবং ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্নের জন্য বিভিন্ন স্থাপত্য কাঠামো ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মন্দির নির্মাণ করেন, যা আজও কালের সাক্ষী হিসাবে টিকে আছে। পুঠিয়ায় অবস্থিত অধিকাংশ মন্দিরে পোড়ামাটির ফলক স্থাপিত আছে। এখানকার পুরাকীর্তির মধ্যে পাঁচআনি রাজবাড়ী বা পুঠিয়া রাজবাড়ী, চারআনি রাজবাড়ী ও ১৩টি মন্দির রয়েছে। পুঠিয়ার প্রত্ননিদর্শনের মধ্যে ১৪টি স্থাপনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণা করেছে।
পাঁচআনি জমিদারবাড়ি বা পুঠিয়া রাজবাড়ী:১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার দ্বিতল বর্তমান রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন। ভবনের সম্মুখ ভাগের স্তম্ভ, অলংকরন, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়ালে ও দরজার উপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ীর ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বীম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল।
গোবিন্দ মন্দির:পুঠিয়া পাঁচআনি জমিদার বাড়ি অঙ্গনে অবস্থিত গোবিন্দ মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি। একটি উচু বেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত বর্গাকার নির্মিত মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে আছে একটি কক্ষ ও চার কর্ণারে রয়েছে ৪টি বর্গাকৃতির ছোট কক্ষ। গর্ভগৃহের চারপাশে ৪টি খিলান প্রবেশ পথ আছে। মন্দিরের কার্ণিশ সামান্য বাকানো। মন্দিরের পিলার ও দেয়াল অসংখ্য দেব-দেবী, যুদ্ধের সাজসজ্জা, ফুল ইত্যাদির পোড়ামাটির ফলক দ্বারা সজ্জিত। প্রেম নারায়ণ রায় আঠারো খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে এই মন্দির নির্মাণ করেন বলে জানা যায়।
ছোট আহ্নিক মন্দির: পুঠিয়া রাজবাড়ীর দক্ষিণ পাশে এ মন্দির অবস্থিত। আয়তাকার নির্মিত উত্তর দক্ষিণে লম্বা এ মন্দিরেরপূর্বদিকে পাশাপাশি ৩টি এবং দক্ষিণ দেয়ালে ১টি খিলান দরজা আছে। মন্দিরের ছাদ দোচালা আকৃতির এবং আংশিক বাকানো। মন্দিরটি আঠারো খ্রিষ্টাব্দে প্রেম নারায়ণ কর্তৃক নির্মিত বলে জানা যায়।
ছোট শিব মন্দির: বর্গাকারে নির্মিত ছোট আকৃতির এ মন্দিরটি রাজবাড়ী হতে ১০০ মিটার দক্ষিণে পুঠিয়া-আড়ানী সড়কের পূর্বপাশে অবস্থিত। মন্দিরের দক্ষিণ দেয়ালে ১টি মাত্র খিলান প্রবেশপথ আছে। মন্দিরের কার্ণিশগুলো আংশিক বাকানো এবং পোড়ামাটির অলংকরণদ্বারা সজ্জিত।
দোল মন্দির: পুঠিয়া বাজারের মধ্যে অবস্থিত বর্গাকারে নির্মিত ৪ তলা বিশিষ্ট একটি সুদৃশ্য ইমারত। মন্দিরের চতূর্থ তলার উপরে আছে গম্ভুজাকৃতির ছাদ। পুঠিয়ার পাঁচআনি জমিদার ভুবেন্দ্রনারায়ণ রায় ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
বড় শিব মন্দির: পুঠিয়া বাজারে প্রবেশ করতেই হাতের বাম পাশে শিবসাগর নামক দীঘির দক্ষিণ পাড়ে বড় শিব মন্দির অবস্থিত। ১৮২৩ সালে নারী ভূবনময়ী দেবী এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। উচু মঞ্চের উপর নির্মিত মন্দিরটির দক্ষিণ দিকে সুপ্রশস্ত সিড়িসহ প্রধান প্রবেশপথ। মন্দিরের চারপাশে টানা বারান্দা এবং বারান্দায় রয়েছে ৫টি করে খিলান প্রবেশপথ। মন্দিরের উত্তর পাশে অবস্থিত দীঘিতে নামার জন্য বাঁধানো ঘাট রয়েছে। চারকোণে ৪টি ও কেন্দ্রস্থলে ১টি চুড়া আছে। জগন্নাথ/রথ মন্দির: বড় শিব মন্দির সংলগ্ন পূর্বদিকে শিবসাগর নামক দীঘির দক্ষিণ পাশে জগন্নাথ বা রথ মন্দির অবস্থিত। দোতলার কক্ষটি ছোট এবং চারপাশে উন্মুক্ত প্রবেশদ্বার রয়েছে। মন্দিরটি ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে রানী ভূবনময়ী কর্তৃক নির্মিত বলে জানা যায়।
চারআনি জমিদারবাড়ী ও মন্দিরসমূহ: পাঁচআনি রাজবাড়ী থেকে প্রায় ১২৫ মিটার পশ্চিমে শ্যামসাগর দিঘীর পশ্চিম পাড়ে পুঠিয়ার চারআনী জমিদার বাড়ি অবস্থিত। চারআনী জমিদার কর্তৃক বড় আহ্নিক, ছোট গোবিন্দ ও গোপাল মন্দির নামে পরিচিত একই অঙ্গনে পাশাপাশি ৩টি মন্দির আছে।
বড় আহ্নিক মন্দির: উত্তর-দক্ষিণে লম্বা আয়তাকার পূর্বমুখি এ মন্দিরে পাশাপাশি ৩টি কক্ষ আছে। মাঝের কক্ষের পূর্বদিকে তিনটি খিলান প্রবেশ পথ এবং উপরে দোচালা আকৃতির ছাদ আছে। আয়তাকার কক্ষের দক্ষিণ ও উত্তর পাশের কক্ষ দুটি বর্গাকৃতির এবং পূর্বদিকে ১টি করে সরু খিলান প্রবেশ পথ আছে এবং ছাদ চৌচালা আকৃতির। মন্দিরটির সম্মুখের দেয়ালে অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক রয়েছে। পুঠিয়া চারআনি জমিদার কর্তৃক মন্দিরটি সতের-আঠারো শতকের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত বলে জানা যায়।
ট গোবিন্দ মন্দির: বড় আহ্নিক মন্দিরের উত্তর পাশে বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরটি ছোট গোবিন্দ মন্দির নামে পরিচিত। এক কক্ষ বিশিষ্ট মন্দিরের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সরু বারান্দা,দক্ষিণ দিকে ৩টি এবং পূর্ব দিকে ১টি খিলান প্রবেশ পথ আছে। মন্দিরের চারপাশের কর্ণারে ও দরজার দুপাশ পোড়ামাটির ফলক দ্বারা নান্দনিকভাবে সজ্জিত। এটির কার্নিশ ধনুকের ন্যায় বাকানো ও উপরে একটি ফিনিয়েল বিশিষ্ট চুড়া আকৃতির ছাদ আছে। দেয়ালের ফলকগুলোতেও যুদ্ধের কাহিনী, বিভিন্ন হিন্দু দেব দেবীর চিত্র, সংস্কৃত ভাষায় রচিত পোড়ামাটির ফলক ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত। এ মন্দিরটি খ্রিস্টীয় ১৭/১৮ শতকে নির্মিত বলে জানা যায়।
গোপাল মন্দির: চার আনি মন্দির চত্ত্বরের উত্তর পাশে অবস্থিত আয়তাকার দ্বিতল মন্দিরের দক্ষিণদিকে ৩টি এবং পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ১টি করে প্রবেশপথ আছে। দক্ষিণমুখী এ মন্দিরের উত্তর দিক ব্যতীত অপর তিন দিকে বারান্দা আছে। মন্দিরের দ্বিতীয় তলায় উঠার জন্য পশ্চিম দিকে ১টি সিড়িআছে।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থানঃ
হাওয়া খানা: পুঠিয়া-রাজশাহী মহাসড়কের তারাপুর বাজার থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দক্ষিণে এবং পুঠিয়া বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে একটি পুকুরের মধ্যবর্তী স্থানে হাওয়াখানা অবস্থিত। দ্বিতল এ ইমারতের নীচতলার আর্চযুক্ত। এ ইমারতের দক্ষিণ পাশে দোতালায় উঠার জন্য সিড়ি আছে। পুঠিয়া রাজবাড়ীর সদস্যরা রাজবাড়ী থেকে রথ বা হাতীযোগে, পুকুরে নৌকায় চড়ে এসে অবকাশ যাপন এবং পুকুরের খোলা হাওয়া উপভোগ করতেন বলে জানা যায়।
কৃষ্ণপুর মন্দির (সালামের মঠ): পুঠিয়া বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে কৃষ্ণপুর গ্রামে খোলা মাঠে এ মন্দিরটি অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি সালামের মঠ নামে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একটি গোবিন্দ মন্দির। প্রবেশপথের উপরে ও দুপাশে পোড়ামাটির ফলকদ্বারা চমৎকারভাবে সজ্জিত।
খিতিশ চন্দ্রের মঠ (শিব মন্দির): পুঠিয়া বাজারের ১ কিলোমিটার পশ্চিমে কৃষ্ণপুর গ্রামে ছোট আকৃতির এ মন্দিরটি অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে খিতিশ চন্দ্রের মঠ হিসাবে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একটি শিব মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরের দক্ষিণ ও পূর্ব দেয়ালে ১টি করে খিলান দরজা আছে।
কেষ্ট খেপার মঠ: বড় শিব মন্দির থেকে আনুমানিক ৫০০ মিটার পশ্চিমে রাম জীবনপুর গ্রামে অবস্থিত এ মন্দিরটি স্থানীয়ভাবে কেষ্ট খেপার মঠ নামে পরিচিত। বর্গাকারে নির্মিত এর দক্ষিণ দেয়ালে ১টি মাত্র প্রবেশপথ আছে এবং উপরে ২৫টি মৌচাকৃতির ছাদ দ্বারা আবৃত। মন্দিরটি ১৮শ শতকের শেষ দিকে নির্মিত বলে ধারণা করা যায়।
নদ নদীর তলিকা
[সম্পাদনা]পুঠিয়া উপজেলায় তিনটি নদী অবস্থিত। নদী গুলো হল:
১। বারনই নদী, এটি শিলমাড়ীয়া ইউনিয়নের সাধনপুরে অবস্থিত।
২। মুছাখাঁ নদী, এটি জিউপাড়া ইউনিয়নে পাশ দিয়ে বয়ে গেছে।
৩। নারোদ নদী, এটি বানেশ্বর ইউনিয়নের বালিয়াঘাটি রঘুরামপুর গ্রামের মধ্যদিয়ে বয়েগেছে।
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]পুঠিয়া উপজেলা কৃষি ও মৎস্য সম্পদের ব্যবসা কেন্দ্র। ঝলমলিয়া ও বানেশ্বর হতে প্রচুর কৃষিজাত পণ্য (কলা,আম, সব্জি) দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। পু্ঠিয়ার বিভিন্ন মাছের আড়ত হতে প্রতিনিয়ত রাজধানী ঢাকায় প্রচুর মাছ সরবরাহ করা হয়।
বিবিধ
[সম্পাদনা]পুঠিয়া উপজেলা থেকে ১৭ কি.মি উত্তরে পচামাড়িয়া পাখির জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে শীত কালে এখানে প্রচুর অতিথি পাখি আসে।
পুঠিয়া আসার মাধ্যম
[সম্পাদনা]রাজশাহী জেলা সদর হতে ৩২ কি.মি. উত্তর- পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে পুঠিয়া অবস্থিত। বাসে করে দেশের যে কোন স্থান হতে পুঠিয়া আসা যায় এবং ট্রেনে করে নাটোর অথবা রাজশাহী নেমেও সড়কপথে সহজে আসা যায়।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে পুঠিয়া"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১২।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |